ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা পোল্যান্ডের
কিয়েভকে অস্ত্র সরবরাহ না করার ঘোষণা দিয়েছে পোল্যান্ড। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। শস্য নিয়ে কূটনৈতিক বিরোধের জেরে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউক্রেনের অন্যতম মিত্র দেশটি।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের শুরু থেকেই কিয়েভকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়েছে পোল্যান্ড। এছাড়া, ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ পোল্যান্ড।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত ইউক্রেনের শস্য আমদানি ঘিরে কূটনৈতিক বিরোধের কারণে ইউক্রেনকে আর অস্ত্র সরবরাহ করবে না পোল্যান্ড। এ প্রসঙ্গে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিয়েভকে অস্ত্র দেয়ার পরিবর্তে আরও আধুনিক অস্ত্র দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করার দিকে মনোনিবেশ করবে তার দেশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কিয়েভ থেকে খাদ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রতিবেশী তিনটি দেশের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে মামলা করে ইউক্রেন। তিনটি দেশ হল স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি।
এদিকে, জাতিসংঘে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলদেমির জেলেনস্কির করা মন্তব্যের জন্য ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রদূতকে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তলব করেছিল পোল্যান্ড। তবে কিয়েভের অভিযোগ, ইউক্রেনের ইইউ প্রতিবেশীদের এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন। অন্যদিকে, আমদানি বন্ধ রাখা দেশগুলো বলছে, সস্তায় শস্য আমদানির প্রভাব থেকে নিজেদের কৃষকদের রক্ষা করতে এই নিষেধাজ্ঞা আবশ্যক।
গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে কৃষ্ণসাগরে জাহাজ চলাচলের প্রধান লেন বন্ধ হয়ে যায়। স্থলপথে বিকল্প রুট খুঁজতে বাধ্য হয় ইউক্রেন। এর ফলে মধ্য ইউরোপে প্রচুর পরিমাণে শস্য ঢুকতে থাকে। সেই ঘটনার জেরে সব দেশের কৃষকরা তখন থেকেই প্রতিবাদ-সমাবেশ করে আসছে।
ফলে ২৭ সদস্যের ইইউ ব্লক চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পোল্যান্ডসহ পাঁচ দেশে ইউক্রেনের শস্য আমদানির ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। মেয়াদ শেষ হওয়ার দিনে ইইউয়ের নির্বাহী সংস্থা হিসেবে ইউরোপীয় কমিশন এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ব্রাতিস্লাভা, ওয়ারশ ও বুদাপেস্ট সরকার ইউরোপীয় কমিশনের এই পদক্ষেপ মানতে অস্বীকার করে।
ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া স্ভিরিডেনকো বলেছেন, আমাদের জন্য এটি প্রমাণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, ইউরোপীয় কমিশনের সিদ্ধান্তের বাইরে ব্লকের সদস্য রাষ্ট্রগুলো পৃথকভাবে ইউক্রেনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে পারে না। তাই আমরা স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা তে মামলা করেছি।
জবাবে পোল্যান্ড সরকারের মুখপাত্র পিওর মুলার বলেন, আমরা আমাদের অবস্থানে অনড়। আমরা মনে করি, এটিই সঠিক পদক্ষেপ। ইইউ ও আন্তর্জাতিক আইন থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতার ভিত্তিতেই এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে প্রচুর সহায়তা দিয়েছে পোল্যান্ড। জার্মানির তৈরি শক্তিশালী লিওপার্ড-২ যুদ্ধ ট্যাংক কিয়েভকে সরবরাহের পাশাপাশি দেশটিকে যুদ্ধবিমান দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল পোল্যান্ড। এছাড়া, ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা ১৫ লাখেরও বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে পোল্যান্ড।