আমরাও প্রয়োজনে স্যাংশন দেবো : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশের ওপর যারা স্যাংশনস (নিষেধাজ্ঞা) দেবে, তাদেরও স্যাংশনস দেয়া হবে। বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বুধবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সফর শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে নিউইয়র্কে দেয়া এক বক্তব্যে বলেছেন, বাইরের দেশ থেকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হলে বাংলাদেশের জনগণও তাদের স্যাংশনস দেবে। স্যাংশনস দেয়া নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অবশ্যই আমরাও স্যাংশনস দেবো। প্রয়োজনে নেবো আমরা। অবশ্যই স্যাংশনস দেবো।
স্যাংশনস কাদের ওপর দেয়া হবে এবং কী বিষয়ে দেয়া হবে- জানতে চাইলে মোমেন বলেন, যারা আমাদের ওপর স্যাংশনস দেবে তাদের ওপর স্যাংশনস দিতে পারি। পারি না? নিশ্চয়ই পারি। প্রয়োজনে নেবো। অত তাড়াহুড়া কীসের? বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্যাংশনস হতে পারে। এগুলো সময়মতো জানবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে নিশ্চয়ই। আমরা আমেরিকাকে বলেছি একমাত্র আওয়ামী লীগ এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এই দেশে শেখ হাসিনা মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। আওয়ামী লীগ এ দেশে গণতন্ত্র জিনিসটা শিখিয়েছে। কিন্তু মাঝখানে সামরিক, বেসামরিক এবং টেকনোক্রেটিক- এ ধরনের কিছু সরকার ছিল, তখন আমাদের দেশে গণতন্ত্রটা ধ্বংস হয়ে যায়। তখন হ্যাঁ-না এর ভোট হয়। এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার হয়, তখন আজিজ কমিশন হয়। এসব করে গণতন্ত্রটাকে ধ্বংস করে দেয়। উল্টাপাল্টা নির্বাচন করে কোনো দল নির্বাচিত হয়, সেখানে কেউ ভোট দেয়নি। বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাই দেড় মাসের মাথায় সেই সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আবার ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। ১৫ বছরে বাংলাদেশে কয়েক হাজার নির্বাচন হয়েছে। এর কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। গত কিছুদিন আগে পাঁচটি সিটিতে মেয়র নির্বাচন হয়। সেখানে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সংঘাতবিহীন নির্বাচন হয়েছে। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং অবাধ নির্বাচন হয়েছে। আমরা সংঘাতহীন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।
বাইডেনের সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতে শেখ হাসিনা বলেছেন- আমার বাবা-মা হারিয়েছি, তিন ভাই হারিয়েছি, ১০ বছরের শিশু আমার ভাইকে হারিয়েছি। আমার পরিবারের ১৭ জন লোক, আমি এবং আমার ছোট বোন ছাড়া এবং তিন সন্তান ছাড়া বাকি সবাইকে হারিয়েছি। তাদের হারানোর পর আমি ছয় বছর দেশে ফিরতে পারি নাই, আর আমার অধিকারও ছিল না। ২১ বছর আমি সংগ্রাম করেছি, তারপর আমি দেশে ফিরে ইনডেমনিটির মতো কুখ্যাত আইন বাতিল করি এবং দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করি। উনি (হাসিনা) বললেন আমার ১৭০ মিলিয়ন জনগণ এখন আমার পরিবার। আমার পরিবার হচ্ছে ১৭ কোটি বাঙালি এবং তাদের মঙ্গলের জন্য তাদের দুই বেলা ভাত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং উন্নত জীবনের জন্য আমার এত সংগ্রাম।
এসব কথা প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে বাইডেনের কাছে বলেছেন বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কথার জবাবে বাইডেন বলেছেন, আমি জানি আপনার উন্নয়ন অত্যন্ত চমৎকার। তবে দিল্লিতে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি।
২২ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।
এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য দায়ী বা এর সঙ্গে জড়িতদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগ হচ্ছে। এর আওতাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরাও রয়েছেন।