১৮ তম দিনে ৭০৪ জনসহ মোট ৫৭৯১ ফিলিস্তিনি নিহত
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের ১৮তম দিনে বিমান হামলা আরো তীব্রতর করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে মঙ্গলবার গত ২৪ ঘণ্টায় ৭০৪ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এনিয়ে গাজায় মোট পাঁচ হাজার ৭৯১ জনের মৃত্যু হলো। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর)বিকেলে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা ও ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে ৩০৫ জন শিশু, ১৭৩ জন নারী ও ৭৮ জন বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৭৯১ জনের মৃত্যু হলো।
ইসরায়েল সেনাবাহিনীর হামলা ও বক্তব্য: ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র দানিয়েল হাগারি মঙ্গলবার সোস্যাল মিডিয়া এক্স বার্তায় (সাবেক টুইটার) বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ৪০০টির বেশি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এর মধ্যে মসজিদও রয়েছে।হামাসের সদস্যরা মসজিদে বসে বৈঠক করায় সেখানে সেনাবাহিনী হামলা চালাতে বাধ্য হয়েছে।
এদিকে ইসরাইল জানিয়েছে, হামাসের হামলা ও তাদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের দেশে নিহত মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়েছে, আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৬৩ সেনা ও পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
আল আকসা বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল: মুসলমানদের কাছে তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল আকসা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) মসজিদটিতে মুসল্লিদের প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা ওয়াফার বরাত দিয়ে সৌদি গণমাধ্যম আল আরাবিয়ার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। জেরুজালেম শহরে অবস্থিত আল আকসা মসজিদ দেখভালের দায়িত্বে থাকা জর্ডানভিত্তিক ইসলামিক ওয়াকফ বিভাগ জানায়,মঙ্গলবার সকালে আল আকসায় নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের বাধা প্রদান করে পুলিশ। প্রথমে তারা শুধু বৃদ্ধদের মসজিদে প্রবেশ করতে দিচ্ছিল। এরপর সব মুসলিমদের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের তেলআবিব সফর: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলায় হতাহতের ঘটনায় ইসরায়েলিদের সহমর্মিতা জানাতে এবং দেশটির প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করতে যুদ্ধের ১৮তম দিনে তেলআবিব পৌঁছেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের অফিস এলিসি প্রাসাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রতি ‘পূর্ণ সংহতির’ বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে এবং ইসরায়েলিদের মুক্তি দিতে হামাসকে চাপ দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একটি প্রকৃত শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করাই ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর তেলআবিব সফরের উদ্দেশ্য।
ওয়াশিংট্ন যাচ্ছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী: সংঘাত নিরসন বা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। মঙ্গলবার(২৪ অক্টোবর) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ওয়াং ই ওয়াশিংটন থাকবেন।
এসময় তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তাছাড়া মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলাপ করবেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জাতিসংঘের বিশেষ অধিবেশন: জর্ডান ও মৌরিতানিয়ার অনুরোধে গাজা বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের বৈঠক ডাকা হয়েছে। মঙ্গলবার এক এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডেনিস ফ্রান্সিস বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ কোনো পরিস্থিতিতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে সাধারণ পরিষদকে এগিয়ে আসতে হয়।
১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাত নিয়ে নতুন এক প্রস্তাব পাশের চেষ্টা করছে। এর আগে গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে বাতিল হয়ে যায়।
যুদ্ধবিরতির সমর্থনে জোসেপ বোরেল: ইউরোপয়ি ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, তিনি আশা করেছেন যে ইইউ নেতারা মানবিক সহায়তার জন্য যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করবেন।
লুক্সেমবার্গে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার পর জোসেপ বোরেল বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে মানবিক সাহায্যের সুবিধার্থে একটি মানবিক বিরতির ধারণা নেতারা সমর্থন করবেন। তেমন একটি বিরতি বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয় খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে নাগরিকদের সরানোর চিন্তা যুক্তরাষ্ট্রের:গাজায় চলমান সংঘাত থামানো না গেলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশটির কয়েক লাখ নাগরিককে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিবে মার্কিন সরকার। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট।
রোববার(২২ অক্টোবর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ আলোচনার বর্ণনায় কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ইসরায়েল এবং প্রতিবেশী লেবাননে বসবাসকারী আমেরিকানরা বিশেষ উদ্বেগের বিষয়। যদিও তারা জোর দিয়ে বলেছেন, নাগরিকদের সরানোর বিষয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।