আর্কাইভ থেকে জাতীয়

রাজনৈতিক অস্থিরতা ভাঙতে উদ্যোগ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: এএফপি’র রিপোর্ট

বাংলাদেশের আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি উদ্যোগ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন তফসিল ঘোষণার আগে দেশের বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বৈঠকে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।রাজনৈতিক দলগুলোর সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে একটি সমাধানের আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এজেন্সি ফ্রান্স প্রেস (এএফপি)এরএক প্রতিবেদনে এতথ্য উঠে এসেছে। সোমবার(১৩ নভেম্বর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে এএফপি।

এতে বলা হয়,ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে,দেশের বড় তিনটি রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক আহবান করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।আসছে জানুয়ারিতে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।তবে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং তার জোটভুক্ত দলগুলো বলেছে,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন একটি নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা জাতীয় নির্বাচন বর্জন করবে।

প্রতিবেদনে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর মহাসমাবেশের বিষয়টিও উঠে এসেছে। এতে বলা হয়,বিরোধীদলগুলোর মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দেওয়ার পর থেকে বিএনপির বিরুদ্ধে দমনপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে সরকার। বিএনপির দাবি,তখন থেকেই দলের প্রায় সব শীর্ষ নেতা ও অন্তত ১১ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এএফপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,বিএনপির ডাকা অবরোধ দুই সপ্তাহ ধরে চলমান রয়েছে।অবরোধ চলাকালে দেশে সহিংসতা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস সোমবার এক বিৃবতিতে জানিয়েছে,রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তিনটি বড় রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক আহবান করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।সহিংসতা পরিহার এবং সংযম চর্চা করার জন্য সব পক্ষের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়,‘যেকোনো দিন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখসহ তফসিল ঘোষণা করতে পারে। তফসিল ঘোষণার আগেই যুক্তরাষ্ট্র এমন উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ তানজিমউদ্দিন খান বলেন,‘ নির্বাচনকে সামনে রেখে এটা হলো রাজনৈতিক অচলাবস্থা ভাঙাতে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক ও সরাসরি উদ্যোগ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক আরও  বলেন,বর্তমান চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির একটি সমাধান বের করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্যই এধরণের উদ্যোগ। এবার দেশের সবচেয়ে বড় তিন দলের প্রতি শর্তহীন সংলাপের আহ্বানের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভূমিকাকে একটি আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও তৃতীয় বৃহৎ দল জাতীয় পার্টি কোনো পক্ষই তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। চলতি মাসের প্রথম দিকে বিএনপির সঙ্গে যে কোনো সংলাপের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন,‘ এই জানোয়ারদের সঙ্গে বসার কথা কারা বলে?

এএফপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,‘বিএনপির শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার হওয়ায় সংলাপে দলটির  প্রতিনিধিত্ব কে করবেন সে ব্যাপারটি এখনও পরিষ্কার নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়,বিএনপি বলছে গত ২৮ নভেম্বর থেকে আই্নশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তাদের ১১ হাজার ২৫০ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন।এদের মধ্যে বিএনপির মসহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও রয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাসনে থাকায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই দলটিকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। তবে সারাদেশে কতজনকে গ্রেফতার হয়েছে-সে ব্যাপারে পুলিশ কোনো পরিসংখ্যান নিা দিলেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে,২৮ অক্টোবর থেকে তারা বিএনপির দুই হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। সংঘর্ষে কমপক্ষে চারজন বিক্ষোভকারী এবং একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তবে বিএনপির দাবি, সহিংসতায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনের শেষ অংশে বলা হয়,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ক্ষমতার ১৫ বছরে বিস্ময়কর অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে মনে করলেও গণতান্ত্রিকভাবে দেশটি পেছনে পড়ে যাওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন