কানাডায় দেখা মিলেছে বঙ্গবন্ধুর খুনী নূর চৌধুরীর
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর চৌধুরীকে কানাডার টরেন্টোতে প্রকাশ্যে দেখা গেছে।তাকে নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করেছে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিবিসি।বাংলাদেশ সময় শুক্রবার মধ্য রাতে সিবিসির অনুসন্ধানী বিভাগ ‘দ্য ফিফথ স্টেট’ এ ‘দ্য অ্যাসাসিন নেক্সট ডোর’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয়।
কানাডায় বাস করছেন বঙ্গন্ধুর খুনিদের অন্যতম নূর চৌধুরী। দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থাকায় তা সম্পর্কে এটুকুই জানা গিয়েছিল। তবে তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর অবশেষে টরেন্টোর নিজ ফ্লাটের ব্যালকনিতে দেখা গেলো তাকে। এছাড়া গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নূর চৌধুরীকে চালকের আসনে বসে থাকা অবস্থায় দেখা যায়। এসময় সিবিসি টেলিভিশনের প্রতিবেদক কথা বলতে চাইলে তিনি দ্রুত গাড়ি চালিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন অনুসরণ করে অবশেষে তাকে খুঁজে বের করেছে ফিফথ স্টেটের অনুসন্ধানী দলটি।
প্রতিবেদনে দেখানো হয়, সিবিসি টেলিভিশনের সাংবাদিক-উপস্থাপক আ্ন্না মারিয়ার এক প্রশ্নের জবাবে নূর চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর হত্যার সময় উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেন।
নূর চৌধুরী বলেন, ‘এটা সত্যি না। আমি আদৌ সেখানে ছিলাম না।আমি ওই জায়গার কাছাকাছি কোথাও ছিলাম না। আমি অন্য এক জায়গায় ছিলাম। এবিষয়টি অনেক লোক জানলেও তারা সামনে আসতে ভয় পায়। আমি নির্দোষ। আমি প্রেসিডেন্টকে হত্যা করিনি।তাই আমি এখানে এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। আমি বিচার চাই এবং কানাডার সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাই।’
সিবিসি টেলিভিশনে প্রচারিত ৪৩ মিনিটের ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘দ্যা অ্যাসাসিন নেক্সট ডোর’ এ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যও উঠে এসেছে। তবে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে নূর চৌধুরীর দাবি মিথা বলে জানান সরকারপ্রধান।
প্রতিবেদনে নূর চৌধুরীর কানাডায় পালিয়ে যাওয়া, ২৭ বছর সেখানে থেকে যাওয়া এবং খুনের অভিযোগে হওয়া শাস্তি বাস্তবায়নে তাকে বাংলাদেশের ফেরত চাওয়ার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার বলেছেন, এই একটি ইস্যু বাদে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। কেবল বাংলাদেশি হাই কমিশনার হিসেবে নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি চাই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক।
তিনি আরও বলেন, নূর চৌধুরী কোথায় আছেন, কী করছেন, এ নিয়ে জানা থাকলেও তথ্য আকারে সামনে আসেনি তেমন। তার অবস্থান নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরির প্রচেষ্টা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই রিপোর্ট প্রচারের মধ্য দিয়ে সেই ধোঁয়াশা কেটে যাবে এবং কানাডিয়ান সাধারণ জনগণ তাদের পাশের বাসায় থাকা ভয়ানক এই খুনি সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা পাবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গুলি করে হত্যার পর বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকার সময় কূটনীতিক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেন নূর চৌধুরী।১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে তিনি পালিয়ে প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পরে কানাডায় প্রবেশ করেন।দর্শনার্থী হিসেবে প্রবেশ করলেও ১৯৯৯ সালে শরণার্থী হিসেবে থেকে যাওয়ার আবেদন করলেও কানাডা সরকার তা নাকচ করে দেয়। এর বিরুদ্ধে আপিল করেও হেরে যান নূর চৌধুরী।
২০০৯ সালে কানাডা থেকে নূরকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন কানাডিয়ান সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু বাংলাদেশে পাঠালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে— এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে ২০১০ সালের দিকে সরকারের কাছে আবেদন করেন নূর চৌধুরী। কানাডা মৃত্যুদণ্ড সমর্থন না করায় এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে তিনি দেশটিতে মুক্ত জীবনযাপন করছেন।