আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

পঞ্চগড়ে ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় ঝলসে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেত

কৃষি জমির ওপর নির্মিত ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও গ্যাসে ৩শ’ বিঘা জমির বোরো ধান ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফল ও ফসলের ক্ষেত ঝলসে গেছে।  স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে ইটভাটার আশপাশের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, বয়স্ক মানুষসহ এলাকার সাধারণ মানুষ। 

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সহযোগীতা না পাওয়ায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয়রা। 

জানা গেছে, শাহীন ব্রিকসের চতুর্দিকে তিনশ বিঘারও বেশি জমিতে বোরো ধান, কলাসহ বিভিন্ন ফসল ও ফলের চাষাবাদ করা হয়েছে। নিজেদের স্বল্প জমি ছাড়াও বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বর্গা নিয়ে কৃষকরা এসব ফসল ও ফল চাষাবাদ করে। গত কয়েকদিন ধরে বয়ে যাওয়া বাতাসে ওই ইট ভাটার ধোয়া ও গ্যাসে বোরো ধানের ক্ষেত ও কলা বাগান ঝলসে গেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আম, কাঠাল, লিচু, সুপারিসহ বিভিন্ন ফল। বিষয়টি ইট ভাটা কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কৃষি বিভাগকে বার বার অবহিত করেও কোন লাভ হয়নি। 

স্থানীয় কৃষকরা জানান, অবৈধভাবে কৃষি জমির ওপর প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই শুধুমাত্র দন্ডপাল ইউনিয়নেই ২০টি ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে ৩টির অনুমোদন থাকলেও অন্যরা বিনা অনুমতিতে অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে তুলেছে। কৃষি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র বিনষ্ট হলেও প্রভাবশালীরা দলীয় প্রভাব ও উৎকোচের বিনিময়ে এসব ইট ভাটা গড়ে তুলেছে। প্রভাবশালী হওয়ায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা প্রতিবাদ করেও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না। প্রতি বছর ইট ভাটার ধোয়া ও গ্যাসে ফসল ও ফলের ক্ষয়ক্ষতি হলেও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবৈধ ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। 

এক বছর আগেও এমন ঘটনা ঘটলে ইট ভাটা কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপুরণের আশ্বাস দিলেও অনেকেই ক্ষতিপুরণ পাননি। ঘুরে ঘুরে মালিক পক্ষের কাছে ধর্ণা দিয়ে যে কয়েকজন ক্ষতিপুরণ পেয়েছেন তার পরিমাণও ছিল সামান্য। 

এবারেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ ওই এলাকার শতাধিক কৃষকরা গেলো রোববার (১০ এপ্রিল) ইটভাটা বন্ধসহ ফসল ও ফলের ক্ষতিপুরণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। 
ওই এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, ইট ভাটার কালো ধোঁয়ায় ধান গাছ পুড়ে গেছে। এক বিঘা জমিতে স্বাভাবিকভাবে ৩০ থেকে ৪০ মণ ধান উৎপাদন হয়। এখন আর আগের মত ধান পাবো না। অর্ধেক ধানও পাওয়া যাবে না। এখন ধান না পেলে খাবো না ঋণ পরিশোধ করবো এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছি। 

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, ইট ভাটা সরানোর দাবি করায় ভাটা মালিক মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন। আমরা ক্ষতিপুরণ চাই না, কৃষি জমির ওপর থেকে ইট ভাটা সরানোর দাবি করছি। 
স্থানিয় দন্ডপাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজগর আলী জানান, ইট ভাটার কালো ধোঁয়ায় ফসলের ক্ষতির বিষয়টি কৃষকদের মুখে শুনেছি।  ইট ভাটার মালিককে কৃষকদের ফসলের ক্ষতিপুরণ দেয়ার কথা বলেছি। 

শাহীন ব্রিকসের ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ধান ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রয়োজনে ক্ষতিপুরণ দেয়া হবে।  

পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের ভুগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের প্রধান তৌহিদুল বারী বাবু জানান, নিচু চিমনি দিয়ে প্রচুর পরিমাণে ভারী সালফার ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে। ভারী সালফার গ্যাস বাতাসে নিচের দিকে আসায় ফল ও ফসলের কাণ্ড ও পাতায় ঢুকে ফসল ও গাছ নষ্ট করে দিচ্ছে। ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে দিগন্ত জোড়া বোরো ধানের শীষ শুকিয়ে পাতানে পরিণত হচ্ছে। 

পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শামীম হোসেন জানান, ফসলের ক্ষয় ক্ষতির বিষয়ে আমার জানা নেই।  

তাসনিয়া রহমান

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন