মোদির ছবি দিয়ে বানাতে হবে সেলফি বুথ
ভারতের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে সেলফি তোলার জায়গা (সেলফি বুথ) রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্দ্রী নরেন্দ্র মোদির বিভিন্ন ছবি থাকবে। বুথে দাঁড়িয়ে মোদির সেসব ছবির সামনে সেলফি তুলতে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা পোস্ট করতে শিক্ষক–শিক্ষার্থী–দর্শনার্থীদের উৎসাহিত করতে হবে। আর এই নির্দেশনা দিয়েছে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
ভারতের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কলেজের অধ্যক্ষদের এ নির্দেশনা দেয়া হেয়েছে। এজন্য শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) কমিশনের পক্ষ থেকে উপাচার্য–অধ্যক্ষদের চিঠি দেয়া হয়েছে।
আগামী বছর ভারতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে এমন নির্দেশনায় বিতর্ক ছড়িয়েছে। সমালোচকেরা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসগুলোকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রচারের অনানুষ্ঠানিক মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে ক্ষমতাসীন মোদি সরকার। আর এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ সেলফি বুথ বানানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলছে ভিন্ন কথা। কমিশনের যুক্তি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের নানান অর্জন রয়েছে। সেলফি বুথে সেসবের আলোকচিত্রের প্রদর্শন ও সেখানে সেলফি তোলা ভারতীয়দের সম্মিলিত গর্ববোধকে উত্সাহিত করবে। সেই সঙ্গে ভারতের অর্জন সম্পর্কে জানতে তরুণ মনে আগ্রহ জন্মাতে ভূমিকা রাখবে।
উপাচার্য–অধ্যক্ষদের কাছে লেখা চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব মনীশ জোশি বলেন, তরুণ প্রজন্মের শক্তি ও উদ্দীপনাকে কাজে লাগানোর অনন্য সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তাদের মনকে উদ্দীপ্ত করে তুলতে হবে।
প্রতিটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এসব সেলফি বুথ বানাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সেলফি বুথে থ্রিডি ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শিক্ষা খাতের আন্তর্জাতিকীকরণ, স্মার্ট ভারত হ্যাকাথন, উচ্চশিক্ষায় ভারতের অগ্রগতিসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে বুথগুলো বানাতে হবে।
এ ধরনের প্রচার চালাতে সরকার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে এমন স্থাপনা নির্মাণ করতে বলার কোনো আইনি কোনো বিধান নেই, এমনটাই বলছেন সমালোচকেরা।
বিভিন্ন শিক্ষাবিদ বলছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির ছবি এর আগেও নানাভাবে প্রচারে ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষত করোনা টিকার সনদের ওপর, মেলাগুলোতে মোদির ছবিসহ সেলফি বুথ স্থাপনসহ বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী হয়েছে ভারতবাসী।
সমালোচকদের মতে, এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে খুব সূক্ষ্মভাবে একটা ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, আর তা হলো—ভারতের অভাবনীয় এসব অর্জনের পেছনে মাত্র একজন ব্যক্তির (মোদি) ভূমিকা রয়েছে।
আলোচিত জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষক বলেন, সেলফি বুথগুলো প্রচারের কৌশলকে উৎসাহ দেবে, বিতর্ক ছড়াবে এবং জনগণের সমস্যা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ এনে দেবে।
ওই শিক্ষক আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো বহু মত লালনের জায়গা। সেলফি বুথ বানানোর ধারণা যদি শুধু একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির মত প্রচারের জায়গা হয়, তাহলে তা দীর্ঘ মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার পরিপন্থী হবে।