নির্বাচন করতে পারবেন না দ্বৈত নাগরিক রুহুল আমিন
দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না নোয়াখালী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার রুহুল আমিন। তার প্রার্থিতা বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনকে দেয়া হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
রুহুল আমিনের করা আবেদন শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ খারিজ করে এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রুহুল আমিনের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো.মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী, আজাহার উল্লাহ ভূঁইয়া ও ইমাম হাছান।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। এছাড়াও তাদের সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভূইয়া, ব্যারিস্টার মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান ও অ্যাডভোকেট মো. ইমাম হাসান।
আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ বলেন, হাইকোর্টের দেয়া বাতিল আদেশ বহাল রয়েছে। আজাহার উল্লাহ ভূঁইয়া জানান, আজকের আদেশের ফলে খন্দকার রুহুল আমিন নির্বাচন করতে পারবেন না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের তথ্য গোপন করে নোয়াখালী-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন খন্দকার রুহুল আমিন। তাকে প্রতীকও বরাদ্দ দেয় নির্বাচন কমিশন। তবে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ১৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শফিকুর রহমান। তাতে সাড়া না পেয়ে ২০ ডিসেম্বর রিট করেন তিনি। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুই সংস্থার প্রতিবেদনে খন্দকার রুহুল আমিনের দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রমাণ মেলে।
এরপর খন্দকার রুহুল আমিনের দ্বৈত নাগরিকত্ব সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্ত করে ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ওই প্রার্থীর দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) মাধ্যমে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে।
তদন্তে খন্দকার রুহুল আমিনের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি উঠে আসে। তার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট ব্যবহারের তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বুধবার নির্বাচন কমিশনকে তার প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভূইয়া বলেন, দ্বৈত নাগরিত্বের তথ্য গোপন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছিলেন খন্দকার রুহুল আমিন। কিন্তু পুলিশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) শাখার তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে সত্য বেরিয়ে আসে। তিনি বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আইন অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই।
নোয়াখালীর সোনামুড়ী উপজেলার আওয়ামী লীগ মনোনীত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন খন্দকার রুহুল আমিন। পদত্যাগ করে নোয়াখালী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কেনেন তিনি। কিন্তু এক শতাংশ ভোটের জটিলতায় প্রাথমিক বাছাইয়ে তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। এর বিরুদ্ধে তিনি আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পান।
এরই মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান জানতে পারেন এ স্বতন্ত্র প্রার্থীর রয়েছে দ্বৈত নাগরিক। রিট করে প্রতিকার চাইলে হাইকোর্ট তার দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি গেলো ২০ ডিসেম্বর তদন্তের নির্দেশ দেন নির্বাচন কমিশনকে। সে অনুযায়ী বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে এসবিকে দায়িত্ব দেয় ইসি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এসবি তদন্তে সত্যতা বেরিয়ে আসে।
তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, খন্দকার রুহুল আমিনের একটি পাসপোর্টে ‘খন্দকার আল আমিন’ অন্যটিতে ‘খন্দকার রুহুল আমিন’ নাম ব্যবহার করা হয়েছে। তবে উভয় পাসপোর্টে জন্মতারিখ ও বাবার নামও একই। পরে এ বিষয়ে প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এ প্রার্থীর প্রার্থিতা বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ইসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।