জাতীয়

‘আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসলেও তা স্বল্পমেয়াদী হতে পারে’

আসছে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসলেও সরকারের মেয়াদ স্বল্পমেয়াদী হতে পারে।শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হলেও এসময়ে বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড,ক্ষমতাসীন দলের ভেতর-বাইরে সহিংসতার শঙ্কা রয়েছে।পাশাপাশি সরকারের ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ বাড়তে পারে। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দুই দলকেই ছাড় দিয়ে সংলাপে বসতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামভিত্তিক অলাভজনক স্বাধীন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান-ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)প্রকাশিত‘বিয়ন্ড দ্য ইলেকশন:ব্রেকিং বাংলাদেশ’স পলিটিক্যাল ডেডলক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব  সুপারিশ ও পরামর্শ তুলে ধরেছে।

বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ প্রতিরোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্রাসেলসভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে উপনীত। নিখুঁত না হলেও একদা প্রাণবন্ত গণতান্ত্রিক এই দেশ ক্ষমতাসীন সরকারের বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প না থাকলেও শিগগিরই তৃতীয় নির্বাচনে যাচ্ছে। নিজের শর্ত অনুযায়ী শেখ হাসিনার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সংকল্প ভোটের আগে ও পরে সহিংসতার ঝুঁকি বাড়াবে। অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতির পাশাপাশি দলটি যে অভ্যন্তরীণ বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছে, সে কারণে আওয়ামী লীগের দিক থেকে সমঝোতা চাওয়ার যৌক্তিক কারণ আছে।’

আইসিজির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে আগামী ৭ জানুয়ারির আগে ও পরে বিরোধীদের সঙ্গে ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের ভেতরের নানা পক্ষের মধ্যে বড় ধরনের সহিংসতা আশঙ্কা রয়েছে। আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানটি বলছে, আসছে ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ স্থগিত সম্ভব না হলেও নির্বাচনের পরের বিপর্যয়ের কথা মাথা রেখে সরকারকে সংলাপের পথ খোলা রাখা উচিত। আইসিজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,‘নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার স্বল্প সময়ের জন্য ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে। তবে এসময়ে সম্ভাব্য সহিংস প্রতিক্রিয়াসহ আওয়ামী লীগের ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ বাড়তে পারে। এই সঙ্কট উত্তরণে দুই পক্ষকে সংলাপে বসা উচিত। প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ এবং বাংলাদেশকে গণতন্ত্র শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে ফিরিয়ে আনতে আলোচনার জন্য উভয়পক্ষ থেকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা প্রয়োজন। বিদেশি অংশীদারদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের উচিত দুপক্ষকে সেই পথে যেতে সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করা।’

শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্য তুলে আইসিজির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধীদের দমিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রশাসনে পরিণত হয়েছে। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে পাওয়া উত্তরাধিকার ও শক্তিশালী দলীয় কাঠামোর কারণে তিনি ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে ব্যাপক সাফল্য গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর সরকার এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নত স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচনাও করা হয়েছে আইসিজির প্রতিবেদনে। আইসিজি বলছে,‘যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকার আওয়ামী লীগের সংকল্পের কারণে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে অবক্ষয় করছে। বিশ্বখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়,‘গত এক দশকে আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ, নিরাপত্তা সংস্থা ও নির্বাচনী কর্তৃপক্ষসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা। এসব জায়গায় অনুগতদের বসিয়েছেন। তাঁর সরকার বিরোধী কর্মী, সুশীল সমাজের ব্যক্তিত্ব এবং সাংবাদিকদের ওপরও নিপীড়ন চালিয়ে আসছে।’ আইসিজির প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল বাতিলের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলের ক্ষেত্রে ২০১১ সালের সংবিধান সংশোধনীর ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পথ বন্ধ হয়। এ কারণে বিরোধী দল ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে এবং ২০১৮ সালের ভোটে অংশ নেওয়ার সময় কর্তৃপক্ষের হাতে ক্রমাগত দমন-পীড়নের সম্মুখীন হয়। এ নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ভরার ব্যাপক অভিযোগের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ৯৬ শতাংশ আসনে জয়ী হয়।

আইজিসি বলছে, ক্ষমতায় থাকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধীদের দমনে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে। বিপরীতে ক্ষমতাসীন দলক ‘বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন।আয়োজনে বাধ্য করতে বদ্ধপরিকর বিএনপি। তেমনটা করা হলে জেতারও আশা করছে দলটি।

আইসিজির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,‘২০০৯ সালে সরকার গঠন করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নিজ তত্ত্বাবধানে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে বেপরোয়া কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট, বৈদেশিক সম্পর্কের পালাবদল এবং নতুন করে উজ্জীবিত বিরোধী দল আওয়ামী লীগের জন্য আরেকটি একতরফা নির্বাচন করা কঠিন করে তুলেছে।’ ব্রাসেলসভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বিরোধীরা নির্বাচন বর্জন করায় ভোটার উপস্থিতি সম্ভবত কম হতে যাচ্ছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর মধ্যেও দাঙ্গা-হাঙ্গামা দেখা দিতে পারে। এসব কারণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ভোটের পর রাজনৈতিক উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এব্যাপারে বাংলাওদেশের প্রধান বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে উৎসাহিত করতে বিদেশি অংশীদার বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ভূমিকা নেওয়া উচিত বলে মনে করে বেলজিয়ামভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন