ভোট শেষে রাশিয়াসহ তিন দেশ ও ওআইসির পর্যবেক্ষকদের সন্তুষ্টি
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসা ওআইসি (ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা), রাশিয়া পর্যবেক্ষকরা।
রোববার(৭ জানুয়ারি) ভোট গ্রহণ শেষে বিকেলে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ভোট পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ মন্তব্য করেন। এ সময় তারা জানান, ভোটার এবং প্রার্থীর এজেন্টদের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন এবং সন্তুষ্ট।
রাশিয়ার পর্যবেক্ষক দলের প্রধান যা বলেছেন: বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন স্বচ্ছ, উন্মুক্ত এবং বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার অ্যান্দ্রে ওয়াই শুটব।
বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ কররা বিষয়টি উল্লেখ করে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘খুব দারুণ নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছে। নির্বাচন স্বচ্ছ, উন্মুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে হয়েছে। ভোটের পরিবেশে নিরাপত্তা ছিল, এটা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য।কোনো বিষয়ে কোনো তথ্যের অভাব ছিল না। গণমাধ্যমকর্মীরা স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহ করেছে।’
বাংলাদেশের যে কোনো সিদ্ধান্ত বিশ্বর চাপিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি নেই উল্লেখ করে অ্যান্দ্রে ওয়াই শুটব ব লেন, ‘বাংলাদেশ তার নিজ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র, স্বাধীন নীতি গ্রহণ করবে। কেউ চাপিয়ে দিলে হবে না। এছাড়া আমরা দেখছি, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে।
ওআইসি: সংবাদ সম্মেলনে ওআইসির নির্বচন ইউনিটের প্রধান শেখ মোহাম্মদ বন্দর বলেন,‘পর্যবেক্ষক হিসেবে সহিংসতার কোনো চিহ্ন আমাদের চোখে পড়েনি। আমি অবাক হয়েছি, দোকান-পাট বন্ধ কেন! সড়কে কোনো মানুষ দেখা যায়নি। শহর ছিল শান্ত।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ মোহাম্মদ বন্দর বলেন,‘আমাকে দুইবার প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনি এমন একটি দেশ থেকে এসেছেন যেখানে যুদ্ধ চলছে। বাংলাদেশে আসা কি গুরুত্বপূর্ণ? বাংলাদেশে আসার জন্য আপনার ওপর কোনো ধরনের চাপ ছিল? বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাপ ছিল কি না? এসময় তিনি বলেন, ‘না। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। তিন মাস আগে আমি যখন জিম্বাবুয়েতে ছিলাম, তখন আমন্ত্রণপত্র পাই। আমি ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর থেকে এসেছি, গাজার মতো সেখানে যুদ্ধ চলছে না।’
ওআইসির নির্বচন ইউনিটের প্রধান বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অভিজ্ঞতা বিনিময়। আপনাদের অভিজ্ঞতা এবং আমি ও বাংলাদেশে আমার সহকর্মীরা আজকে যা দেখলাম। এই সফরে আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখলাম। এটা একটি পেশাগত সফর ছিল।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ দেখে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা ভালো নির্বাচনী প্রক্রিয়া দেখেছি।’
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ মোহাম্মদ বন্দর বলেন, ‘আমি এখনও জানি না কত শতাংশ ভোট পড়েছে। আমরা সকালে যখন স কেন্দ্র পরিদর্শন করি, তখন ভোটার উপস্থিতি খুবই কম ছিল। মানুষ আশা করছিল উপস্থিতি বাড়বে। যদি বাধ্যবাধকতা না থাকে, আপনি কেন্দ্রে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং কেউ আপনাকে ভোট দিতে বাধ্য করতে পারে না। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের দেশে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই, তাই এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না।
নির্বাচনে কম ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওআইসির নির্বাচন ইউনিটের প্রধান শেখ মোহাম্মদ বন্দর বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজকদের জন্য বার্তা হবে যদি ১৫ বা ১৬ শতাংশ ভোট পড়ে। এর কারণ রাজনীতিকরা বিশ্লেষণ করবেন। আমি জর্ডানে অনেক নির্বাচন দেখেছি, সেখানে ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে এবং সেটা ভালো নির্বাচন ছিল। এসব বিষয় রাজনীতিক ও গবেষণা সংস্থাগুলো দেখবে।
ফিলিস্তিন: ভোটের পদ্ধতি বিচার করতে আসার কথা উল্লেখ করে ফিলিস্তিনি নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের প্রধান হিশাম কুহাইল বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে আমরা মূল্যায়ন করতে আসিনি। তবে আমরা কোনো ধরনের সহিংসতা লক্ষ করিনি।
গাম্বিয়া:সংবাদ সম্মেলনে স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে গাম্বিয়ার পর্যবেক্ষক দল।