আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

সাফল্য ও অগ্রগতির ১৭তম বর্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর লাল পাহাড়ের সবুজ ক্যাম্পাস নামে খ্যাত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় । ২০০৬ সালের ২৮ মে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। কুমিল্লা শহর থেকে ৯ কি.মি পশ্চিমে কুমিল্লার ময়নামতি সংলগ্ন লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে প্রকৃতির আপনকোলে সবুজের অভয়ারণ্যে অবস্থিত দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৬বছর পেরিয়ে ১৭তম বর্ষে পদার্পণ করেছে লাল পাহাড়ের সবুজ ক্যাম্পাস।

৫০ একর ভুমির উপর স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিশাল আকাশের পানে। এর কোলঘেষে রয়েছে নব শালবনবিহার, শালবন, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ, ময়নামতি জাদুঘর এবং সামাজিক বনায়ন। প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তাছাড়া আগত শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন মন-মানসিকতা একই বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এক হাস্য-উজ্জ্বল পরিবেশের জন্ম নেয়। তাদের মাঝে গড়ে উঠে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, আড্ডা, হাসি,গান ও বিভিন্ন ধরণের নাট্যাভিনয়। সবকিছু মিলিয়ে তারা এক নতুন জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের উপযোগী করে তোলে।

মনোমুগ্ধকর ক্যাম্পাসটির পরিবেশ সবাইকে নব-স্বপ্নে জেগে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ভবন গুলোর ছাদের উপরে উঠলে মনে হয় পাহাড়ের পর পাহাড় আবার পাহাড় যেন বিচলিত সংখ্যাতীত তরঙ্গ। এছাড়া সারি সারি বৃক্ষরাজি দেখে মনে হয় নব-বধূর নবরূপে সজ্জিত অনিন্দ্য সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। যার অপরূপ সৌন্দর্যতা সকলের মন কেড়ে নেয়। লাল পাহাড়ের সবুজ ক্যাম্পাসের মুগ্ধতায় হাজার হাজার দর্শনার্থী ছুটে আসে অনিন্দ্য সুন্দরের লীলাভূমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য কতগুলো চত্বর সম্পূর্ণতা দান করেছে সমগ্র ক্যাম্পাসটিকে। প্রসিদ্ধ স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসাবে দেখতে পায় কাঁঠাল তলা, বৈশাখী চত্বর, লালন চত্বর, মুক্তমঞ্চ, বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য, প্রেম সেতু, সানসেট ভ্যালি, ক্যাফেটেরিয়া, শহীদ মিনার, জিরো পয়েন্ট এবং ভিসি টং। উক্ত স্থানগুলোর মধ্যে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের মাঝে জমে উঠে আড্ডা, গানের আসর প্রভৃতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি যেসব বিষয় অন্যান্য শিক্ষামূলক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত সেগুলো হল থিয়েটার, প্রতিবর্তন, অনুপ্রাস, রোভার স্কাউট, বিএনসিসি,সায়েন্স ক্লাব, বন্ধু,অনুস্বার,মুকুল, আইটি সোসাইটি এবং প্লাটফর্ম। আছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সংগঠন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (কুবিসাস)। এসব সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি মানসিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। যার কারণে আজ প্রত্যেক শিক্ষার্থী উন্মুক্ত পরিবেশে নিজেকে একজন যোগ্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে।

২০০৭ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে ৭টি বিভাগ, ৩০০ জন শিক্ষার্থী, ১৫ জন শিক্ষক ও ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে চালু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ছয়টি অনুষদের (কলা ও মানবিক অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, আইন অনুষদ, প্রকৌশল অনুষদ ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ) অধীনে ১৯টি বিভাগে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী, ২৬৬ জন শিক্ষক, ৯৬ জন কর্মকর্তা, ২০৭ জন কর্মচারী রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪টি আবাসিক হল(কাজী নজরুল ইসলাম হল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হল) রয়েছে। যেখানে ছাত্রদের জন্য তিনটি, ছাত্রীদের জন্য রয়েছে একটি আবাসিক হল। এছাড়াও শিক্ষকবৃন্দ ও কর্মকর্তাদের জন্য ডরমেটরি গেস্টহাউজ নির্মাণাধীন রয়েছে।

 

মেঘ হাসান

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন