আন্তর্জাতিক

কম্বল না দেওয়ায় হাতুড়ি দিয়ে ভারতীয় শিক্ষার্থীকে খুন!

প্রচণ্ড শীতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন গৃহহীন এক মার্কিন নাগরিক। শীত থেকে বাঁচাতে ওই ব্যক্তিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এক ভারতীয় শিক্ষার্থী। বিবেক সাইনি নামে ওই শিক্ষার্থী নিজের পড়ার খরচ জোগাতে ফুড মার্টে চাকুরি করতেন। তার দোকানের ভেতরই আশ্রয় দিয়েছিলেন জুলিয়ান ফকনার নামে ওই মার্কিনীকে। খেতে দিয়েছিলেন চিপস ও কেক। খাওয়া দাওয়ার পর একটি কম্বল চেয়েছিলেন ফকনার। কম্বল না থাকায় নিজের একটি জ্যাকেট দেন বিবেক সাইনি। আর এতেই কাল হয় ভারতীয় শিক্ষার্থীর। বিবেকের ওপর প্রচণ্ড ক্ষেপে ওঠেন ফকনার। এক পর্যায়ে দোকান থেকে একটি হাতুড়ি নিয়ে পেছন থেকে বিবেকের উপর হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই বিবেকের মৃত্যু হয়।

গত ১৮ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের লিথোনিয়ার একটি শেভরন গ্যাস স্টেশনের দোকানে ওই  নির্মম খুনের ঘটনা ঘটে।

ভারতের এনডিটিভিসহ একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত জুলিয়ান ফকনার  প্রথমে বিবেক সাইনিকে পেছন থেকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন, তারপর একে একে মুখে ও মাথায়ও আঘাত করেন। জর্জিয়া পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫ বছর বয়সী ভারতীয় ওই শিক্ষার্থীকে  হত্যার ঘটনাটি গত ১৮ জানুয়ারি ঘটলেও তা প্রকাশ্যে আসে  রোববার (২৮ জানুয়ারি)। খুনের ঘটনায় জড়িত ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে জর্জিয়ার পুলিশ।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ওই ব্যক্তিটি হাতুড়ি দিয়ে ভারতীয় শিক্ষার্থীকে আঘাত করছেন। প্রাথমিক তদন্তের পর জর্জিয়ার পুলিশ জানিয়েছে, খুন হওয়া ভারতীয় পড়ুয়া কয়েক বছর আগে উচ্চশিক্ষার জন্য জর্জিয়ায় আসেন। নিজের পড়াশোনার খরচ জোগানোর জন্য ফুড মার্টটিতে কাজ করতেন।

জর্জিয়ার একটি স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, খুন হওয়া ভারতীয় শিক্ষার্থীর নাম বিবেক সাইনি। নিজের পড়ার খরচ চালাতে ফুড মার্টে চাকুরি করতেন।ঘটনার দিন বাইরের তীব্র ঠাণ্ডা থেকে বাঁচাতে জুলিয়ান ফকনার নামে এক ব্যক্তিকে দোকানের ভেতর আশ্রয় দিয়েছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৯ বছর বয়সী  ফকনারকে ক্ষুধা নিবারণে কেক ও চিপসও দিয়েছিলেন বিবেক। খাওয়া দাওয়ার পর একটি কম্বল চেয়েছিলেন অভিযুক্ত। কম্বল না থাকায়, অভিযুক্তকে একটি জ্যাকেট দেন বিবেক সাইনি। আর এতেই ক্ষেপে উঠেন ফকনার। দোকানের একটি হাতুড়ি নিয়ে ৩৬ সেকেন্ডে মোট ২৭ বার আঘাত করেছিলেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,  জ্যাকেট পাওয়ার পর বিবেকের কাছে সিগারেট, পানিসহ আরও অনেক কিছুই চাইতে শুরু করে দোকানের ভেতরে হাঁটাহাঁটি করতে থাকেন ফকনার। এক পর্যায়ে বসে পড়েন। বাইরে ঠাণ্ডা থাকার কারণে ফকনারকে বাইরেও যেতে বলা যাচ্ছিলো না। তারপরও চাকরি হারানোর ভয়ে দোকানে থেকে বেরিয়ে যেতে ফকনারকে অনুরোধ করেন বিবেক। তবে তিনি তাতে রাজি হচ্ছিলেন না।

এক পর্যায়ে পুলিশকে খবর দেয়ার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেপে ওঠেন ফকনার। বিবেক দোকান থেকে বেরিয়ে যাবার সময় পেছন থেকে হাতুড়ি নিয়ে হামলা চালান তিনি।   বিবেক সাইনিকে উপুর্যপরি ৫০ বার আঘাত করেন। মাথা থেতলে যাওয়ায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে।

বিবেকের চিৎকার শুনে দোকানের অন্যান্য কর্মচারিরা ছুটে আসেন। তাদের ছুটে আসতে দেখে, চম্পট দেয় অভিযুক্ত। হাতুড়ির আঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ভারতীয় শিক্ষার্থীর। পরে পুলিশ দ্রুত এসে মরদেহটি উদ্ধার করে এবং  ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়।

ফক্স নিউজ আটলান্টার প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জুলিয়ান ফকনারকে দেখতে পায়। ওইসময় তিনি  হাতুড়ি ধরেই অপর এক কর্মিকে জিম্মি করে রেখেছিলেন। পুলিশ ফকনারকে হাতুড়ি নামিয়ে রাখার নির্দেশ দিলে অভিযুক্ত তাতে সায় দেন। পরে পুর্লিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় ফকনারের কাছ থেকে ‍২টি ছুরি ও আরেকটি হাতুড়ি  জব্দ করে পুলিশ।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন