এখনো বিপদসীমার ওপর ব্রহ্মপুত্র-ধরলার পানি
উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো খারাপের দিকে। ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫১ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
সোমবার (২০ জুন) সকালে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্র থেকে এ তথ্য জানা যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্র মতে, কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত জেলার নয় উপজেলার কমপক্ষে দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, পানিবন্দি মানুষ খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকটসহ গবাদি পশুর নিরাপদ জায়গা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় অনেক এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে করে তারা দুর্ভোগ নিয়ে কলাগাছের ভেলা কিংবা নৌকায় যাতায়াত করছেন। পানিতে তলিয়ে গেছে ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল। বন্যায় প্রাণিসম্পদের সাড়ে ১১ লাখ টাকার এবং মৎস বিভাগের ৫৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এমনকি বন্যায় শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। শনিবার (১৮ জুন) দুপুরে উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের যমুনা সরকারপাড়া গ্রামের মাঈদুল ইসলামের মেয়ে মাকসুদা জান্নাত (১১) বাড়ির পাশে বন্যার পানিতে পরে মারা যায়।
বন্যা পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম, ৯টি উপজেলায় একটি করে মনিটরিং টিম এবং সিভিল সার্জন অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে ১৮টি ভেটেনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার নাগেশ্বরীতে বেড়িবাঁধের ৫০ মিটার ওয়াস আউট হয়ে গেছে। এছাড়া দুধকুমর নদীর কালিগঞ্জ, বামনডাঙ্গা ও ধাউরারকুটি এলাকায় বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই এলাকায় ৪৮ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করা হবে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসক দপ্তরে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতিদিনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রদান করতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ লাখ টাকা এবং ৪০৭ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। এছাড়াও আরো ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লাখ টাকার চাহিদা দেয়া হয়েছে।
টিআর