কতটা ঘুমোলে রোগমুক্ত থাকা যায়, জেনে নিন
ক্যানসার রোগে কেউ আক্রান্ত হয়েছেন শুনলেই মাথা থেকে শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যেতে থাকে ঠান্ডা স্রোত। অনেকেই হয়তো জানেন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস এবং জিনগত কারণেও শরীরে ক্যানসার বাসা বাঁধে। কিন্তু এই ক্যানসারের সঙ্গে যে ঘুমেরও যোগ রয়েছে, তা হয়তো অনেকেই জানেন না। ইদানীং পেশাগত কারণে বেশির ভাগ মানুষই রাতে টানা ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমোতে পারেন না। রাত জেগে কাজ করতে হয় বলে অনেকেই দিনের বেলা ঘুমিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করেন। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ঘুমের এই চরিত্রগত বদল অন্যান্য রোগের পাশাপাশি, ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। দীর্ঘ দিন ধরে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে হজমের গোলমাল থেকে কাজে অনীহা, অবসাদ, মাথা যন্ত্রণা, মাইগ্রেন, বিপাকহার কমে যাওয়া, সঙ্গে বিপাকহার সংক্রান্ত নানা রোগ, যেমন হরমোনের হেরফের, ডায়াবিটিস, স্থূলত্ব আরও কত কী! কোভিড পরবর্তী সময়ে আরও একটি রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সেটি হল ‘সার্কাডিয়ান রিদ্ম ডিজঅর্ডার’।
মানুষের ঘুম থেকে ওঠা বা ঘুমোতে যাওয়ার যে স্বাভাবিক সময়, তা একেবারে বদলে গিয়েছে। চিকিৎসা পরিভাষায় এই ধরনের সমস্যাকে শিফ্ট ওয়ার্ক ডিজঅর্ডারও বলা হয়। মারণরোগ ক্যানসার কীভাবে ঘুমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আজ থেকে ২০ বছর আগে যত মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হতেন, এখন সেই সংখ্যাটা অনেক বেশি। তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার যে ক্যানসারের কারণ, তা সকলেই জানেন। কিন্তু ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আরও একটি কারণ যে অপর্যাপ্ত ঘুম, সে সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষেরই ধারণা নেই। ঘুম নিয়ে সাধারণ মানুষ বা পেশাদারদের মধ্যে তেমন সচেতনতা এখনও গড়ে ওঠেনি, কিন্তু আজ থেকে দশ বছর পরে অবশ্যই তা স্বাস্থ্যবিধির আওতায় আসবে।
অপর্যাপ্ত ঘুম এবং শরীরে তার প্রভাব নিয়ে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গবেষণা রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে যদি ৬ ঘণ্টার কম সময় ঘুমোন, তা হলে ৬০ শতাংশ পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে। ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ক্যানসার’-এ সেই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ৫৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন ফুসফুসের ক্যানসারে। অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন ৪০ শতাংশ মানুষ।
আবার ক্যানসার এপিডেমিয়োলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, দিনে ৬ ঘণ্টার কম ঘুম হলে মহিলাদের মধ্যে ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে ৩০ শতাংশ। ৫০ শতাংশের হতে পারে মলাশয়ের ক্যানসার। ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া, উচ্চ রক্তচাপ, কোরোনারি হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক, টাইপ ২ ডায়াবিটিস, ইনসুলিন রেজিজট্যান্স তো আছেই।
শুধু ক্যানসার নয়, জীবনধারা সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে কোনও ধরনের রোগই মারণরোগ হয়ে উঠতে পারে। সারা দিন ধরে আমাদের শরীরে যত ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়, তার মেরামতি চলে ঘুমের মধ্যে। ঘুমের সময় কমে এলে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) উপাদানটিও মেরামত হয় না। আর এটিই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার একটি বড় কারণ।
চিকিৎসকদের মতে, শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার খেলেই হবে না। সার্কাডিয়ান সাইকেলটি আগে ঠিক করতে হবে। অর্থাৎ শরীরের যে নিজস্ব ছন্দ, তাতে ব্যাঘাত ঘটানো চলবে না। পাশাপাশি, ঘুম যাতে গভীর হয়, তার জন্য ঘুমোতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে সব রকম মাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হবে। বিশেষ করে যে সব যন্ত্র থেকে ব্লু লাইট নির্গত হয়, সেই সব ডিভাইজের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্যাফিন জাতীয় কোনও খাবার, পানীয় খাওয়া যাবে না। তবে চাইলে বই পড়া যেতে পারে।