জিলাপির প্যাঁচে লুকিয়ে আছে যে রহস্য!
আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশে জিলাপি একটি জনপ্রিয় খাবার। নানা স্বাদ-বৈচিত্র্যে পরিবেশন করা হয় জিলাপি। সকালে নাস্তার টেবিলে কিংবা বন্ধুদের আড্ডায়, গরম গরম মচমচে জিলাপি খেতে কার না ভালো লাগে। বাঙালি থেকে অবাঙালি সবাই এই মজাদার মিষ্টির ভক্ত। বাংলায় আজও বহু মানুষের প্রাতরাশের তালিকাতেই থাকে গরম কচুরি আর জিলিপি। আবার, মেলার মাঠে জিলিপি খুঁজে বেড়ান এমন মানুষও প্রচুর। কিন্তু জানেন কি, কেন প্যাঁচ থাকে জিলিপিতে?
ঠিক আড়াই প্যাঁচেই আঙুলের কায়দায় এই মিষ্টি বানিয়ে ফেলেন মিষ্টিপ্রস্তুতকারকরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জিলাপি তৈরির ভিন্নতা রয়েছে। সারা বছর জিলিপির রমরমা অবস্থা চললেও রমজানে কদর একটু বেশিই থাকে। এই রসালো মুচমুচে মিষ্টিটাকে পছন্দ করেন না এমন মানুষ নিঃসন্দেহে বিরল।
কিন্তু কোথায় বা কবে জিলাপি প্রথম বানানো হয়েছিল? এই বিষয়ে বিস্তর মতান্তর থাকলেও বিভিন্ন তথ্যসূত্র অনুযায়ী জানা যায়, প্রথম জিলিপির আবিষ্কার হয়েছিল আজ থেকে ৬০০ বছর আগে। ‘অক্সফোর্ড কম্পানিয়ন টু ফুড’ বইতে লেখা রয়েছে এই মিষ্টির কথা। সেখানে বলা হয়েছে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মোহাম্মদ বিন হাসান আল বাগদাদি রচিত এক বইয়ে জিলিপির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের খাদ্যবিষয়ক গবেষক ক্লডিয়া রডেনের দাবি, ত্রয়োদশ শতাব্দীর আগেই হানুক্কাহ অনুষ্ঠানে মিশরের ইহুদিরা ‘জালাবিয়া’ নামক এক মিষ্টি প্রস্তুত করতেন। এই জালাবিয়াই কালক্রমে বর্তমান জিলাপির রূপ নেয়। ১৪০০-১৫০০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে জিলাপির প্রচলন ছিল যার নাম ছিল ‘কুণ্ডলিকা’ বা ‘জলবল্লিকা’।
গবেষকদের একাংশের মতে, মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে প্রথম জিলাপি প্রস্তুত করা হয়। তবে এই মিষ্টি পশ্চিম এশিয়া থেকে এই দেশে এলেও বর্তমানে বাংলাদেশেও জনপ্রিয়তা খুব বেশি।
জিলাপি সাধারণত তৈরি করা হয় ময়দা ও চালের গুঁড়োর মিশ্রণ দিয়ে। আড়াই প্যাঁচ দিয়ে তেলে ভেজে চিনির শিরায় ডুব দেয় এই মিষ্টি। কিন্তু জিলাপির এই ঘোরালো প্যাঁচ এমনই আলোচনার বিষয়বস্তু যে এর সঙ্গে জটিল মানুষের মানসিকতার তুলনা করা হয়!
তবে জিলাপির এমন আকৃতির কারণ কী? সেই সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছুই জানা না গেলেও বিভিন্ন সূত্র অনুসারে, বিশেষভাবে পরিচিত করে তোলার জন্যই জিলাপি এমন প্যাঁচ দিয়ে বানানো শুরু হয়েছিল। আবার খাদ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আকারে লম্বা করলে জায়গা বেশি লাগবে বা ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা এড়াতেই জিলাপি এমন গোল প্যাঁচ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।