রাফাহতে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল: নেতানিয়াহু
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বললেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) হামাসের কাছে জিম্মি ইসরায়েলি সৈন্যদের পরিবারের সঙ্গে এক বৈঠকের বক্তৃতায় এ মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা গাজা উপত্যকার উত্তর এবং খান ইউনিস জয় করেছি। আমরা উপত্যকাটি সুরক্ষিত করেছি, এবং আমরা রাফাতে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
শুধুমাত্র সামরিক চাপই জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করবে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের সফলতার মূলমন্ত্র শক্তিশালী সামরিক চাপের ধারাবাহিকতা যা আমরা প্রয়োগ করেছি এবং করব... যা সবাইকে ফিরিয়ে দেবে।’।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা কাউকে পেছনে রেখে আসব না।’
হামাস জিম্মি চুক্তি এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনায় সর্বশেষ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার মাত্র কয়েকদিন পরে নেতানিয়াহুর মন্তব্য আসে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুতে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
একটি বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, ‘রাফাহতে অভিযানের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’ তবে কখন থেকে এবং কিভাবে এই অভিযান চালানো হবে সে বিষয়ে বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অপারেশনাল দিক দিয়ে এবং রাফাহতে অবস্থানরত ফিলিস্তিনি জনগণকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে ইসরায়েল রাফাহতে সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনার ফলে বৈশ্বিক সমালোচনার মুখে পড়েছে। কারণ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল হিসেবে সেখানে ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন, যা গাজার মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যিনি যুদ্ধের সময় ইসরায়েলকে সমর্থন করেছিলেন- তিনিও বলেছেন, রাফাহতে ইসরায়েলি আক্রমণ একটি বিশ্বাসযোগ্য বেসামরিক সুরক্ষা পরিকল্পনা ছাড়াই ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করা হবে।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন শুক্রবার অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা সফরের সময় বলেন, ‘ওয়াশিংটন রাফাহ অভিযানের কোনো পরিকল্পনা দেখেনি। তবে ইসরায়েল যদি রাফাহতে কোনো ধরনের সামরিক অভিযান চালাতে চায় তাহলে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি ‘স্পষ্ট ও বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা’ দেখাতে হবে।
সরকারি ওয়াফা বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কার্যালয় রাফাহতে একটি আসন্ন ইসরায়েলি সামরিক হামলার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে এই সামরিক আক্রমণ এড়াতে মার্কিন প্রশাসন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয়েরই দ্রুত হস্তক্ষেপের ওপর জোর দিয়েছে। কারণ এতে গাজায় একটি নতুন গণহত্যা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ইতোমধ্যে অপরিমেয় দুর্ভোগকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
গত বছরের নভেম্বরে কাতারের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন মহিলা এবং ১৬৯টি শিশু রয়েছে। বিনিময়ে ২৪ বিদেশিসহ মোট ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। হামাসের কাছে এখনো প্রায় ১৩০ জন জিম্মি রয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের।