শুধু গান গেয়েই ১০ হাজার কোটি টাকার মালিক যে শিল্পী
প্রথমবারের মতো শতকোটিপতি বা বিলিওনিয়ারের এলিট ক্লাবে প্রবেশ করেছেন জনপ্রিয় মার্কিন সংগীত তারকা টেইলর সুইফট। নাম লেখালেন বিলিয়ন ডলার আয় করা তারকাদের তালিকায়। মঙ্গলবার(২ এপ্রিল) ফোর্বস ম্যাগাজিন ১৪ জন বিলিয়নিয়ার তারকার খবর প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ১৪তম অবস্থানে রয়েছেন এই পপ গায়িকা। এই ১৪ ধনী তারকার সম্পদের মোট পরিমাণ ৩১ বিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।
জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী, বিশ্বখ্যাত পপ শিল্পী, রেকর্ড প্রযোজক, র্যাপার, গীতিকার ও অভিনেত্রী-সব পরিচয়ে পরিচিত ৩৪ বছর বয়সী টেইলর সুইফট। শ্রোতা-দর্শকদের ১০টি জনপ্রিয় অ্যালবাম উপহার, রেকর্ড চারবার সেরা অ্যালবামের গ্র্যামি জয়ী টেইলর সুইফটই প্রথম যিনি শুধুমাত্র গানের ওপর ভিত্তি করে একজন বিলিয়নিয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন।
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে টেইলর সুইফটের সম্পদের পরিমাণ ১.১ বিলিয়ন বা ১১০ কোটি ডলারেরও বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২ হাজার ৬৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বেশি।
গত জুনের পর থেকে সুইফটের মোট সম্পদে ৩৬০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ যোগ হয়েছে। সে সময় নিজের যোগ্যতায় সবচেয়ে ধনী হওয়া মার্কিন নারীদের মধ্যে ৩৪ নম্বরে ছিলেন সুইফট।
প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে ১০টি জনপ্রিয় অ্যালবাম উপহার দিয়েছেন টেলর সুইফট।এই বিষয়টি উদ্যাপন করতেই সম্প্রতি ইরাস ট্যুর শুরু করেছিলেন তিনি। এই ট্যুরের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একের পর এক কনসার্ট করছেন সুইফট। ইরাস ট্যুরের মধ্য দিয়ে বিপুল আর্থিক লাভেরও মুখ দেখলেন মার্কিন পপ তারকা।
ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে সুইফটের ইরাস ট্যুরের টিকিট ৭৮০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছে। তাই সুইফটের এই সফরকে সর্বকালের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী সফর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই সফরের বিপুল আয় ৩৩ বছর বয়সী গায়িকাকে মর্যাদাপূর্ণ বিলিয়নিয়ার ক্লাবেও পৌঁছে দিয়েছে।
লাইভ-মিউজিক বাণিজ্য প্রকাশনা ‘পোলস্টার’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ি, ইরাস ট্যুর হলো বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করা প্রথম সফর । ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত, ১২ মাসের টিকিট বিক্রিতে সুইফটের ট্যুর এই বিশাল মাইফলক অর্জন করে। এসময়ের মধ্যে ৬০টি শো থেকে ইরাস ট্যুর আনুমানিক ৪.৩৫ মিলিয়ন বা ৪০ লাখ ৩৫ হাজার টিকিট বিক্রি করেছে।
গত বছর থেকেই নতুন করে আলোচনায় ছিলেন সংগীতশিল্পী টেলর সুইফট। এর অন্যতম কারণ তাঁর দ্য ইরাস ট্যুর।ইরাস ট্যুরের সময়টিকে সুইফটের জীবনের ‘অবিস্মরণীয় গ্রীষ্ম’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে ফোর্বস বোলছে, এই ট্যুরের প্রথম পর্ব থেকে কর পরিশোধের পরও ১৯০ মিলিয়ন ডলার আয় করেন টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৩-এর বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব বা পারসন অব দ্য ইয়ার টেইলর সুইফট।
গায়িকার বহুল আলোচিত এই ইরাস ট্যুর নিয়ে নির্মিত সিনেমা গত অক্টোবরে মুক্তি পায়। বিশ্বজুড়ে সিনেমাটি ২৬১ মিলিয়ন ডলার আয় করে। গ্র্যামিজয়ী এই তারকার বিশ্বজুড়ে ৫০ মিলিয়নের বেশি অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে। সব মিলিয়ে সুইফটে সম্পদের ৫০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ এসেছে মূলত সংগীত রয়্যালটি এবং সফরের মধ্য দিয়ে। আরও ৫০০ মিলিয়ন ডলার এসেছে তাঁর সংগীত ক্যাটালগের ক্রমবর্ধমান মূল্যের ওপর ভিত্তি করে। ৬টি বিলাসবহুল বাড়ি এবং ১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি ব্যক্তিগত জেট বিমান রয়েছে এই গায়িকার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে,বর্তমানে বিলিয়নিয়ার তালিকায় আরও চারজন সংগীত তারকা থাকলেও সুইফটের মতো তাঁরা কেউই শুধুমাত্র সংগীত থেকে এই অর্থ উপার্জন করেননি। এদের মধ্যে র্যাপার গায়ক জে-জেডের রয়েছে আরমান্দ ডি ব্রাইন্যাক এবং ডি’উজি নামে দুটি মদের ব্র্যান্ড। পাশাপাশি উবারের মতো একাধিক কোম্পানিতেও তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে।
অন্যদিকে, সংগীত শিল্পী রিহানাও বিলিয়নিয়ার ক্লাবে পৌঁছেছেন ফ্যান্টি বিউটি নামে তাঁর প্রসাধনী ব্র্যান্ড দিয়ে। অন্তর্বাসের ব্র্যান্ড স্যাভেজ অ্যাক্স ফেন্টিও বিপুল লাভবান করেছে সম্প্রতি ভারতের শীর্ষধনী আম্বানী পুত্রের বিয়েতে গান গেয়ে ৭৪ কোটি রুপি পাওয়া এই মার্কিন গায়ক-গীতিকার ও অভিনেত্রী।
তৃতীয় সঙ্গীত তারকা হলেন প্রয়াত জিমি বাফেট। সংগীতের চেয়েও মার্গারিটাভিল হোল্ডিংস সাম্রাজ্য, অ্যালকোহল ব্যবসা এবং বার্কশায়ার হ্যাথওয়েতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিলিয়নিয়ার হয়ে উঠেছিলেন জিমি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মৃত্যুর আগে মার্কিন এই গায়ক-গীতিকারকে বিলিয়নিয়ার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল ফোর্বস।
এসব বিষয় পর্যালোচনা করে শুধুমাত্র সংগীত দিয়ে বিলিয়নিয়ার হওয়া টেলর সুইফটকে তুলনা করা হচ্ছে ব্রুস স্প্রিংস্টিনের মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে।
জীবদ্দশায় শুধুমাত্র রোড শো করেই বিলিয়ন ডলার আয় করেছিলেন আমেরিকান এই রক সঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার ও গিটারিস্ট।