আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ঢাবির পর রাবিতে ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত দিবেন ভর্তি পরীক্ষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পর এবার একবুক স্বপ্ন নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসছেন ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত শেখ।

আগামী মঙ্গলবার ‘এ’ ইউনিটের প্রথম শিফটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিনি। সেমাবার রাজশাহী আসবেন বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বেলায়েত শেখ।

১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন বেলায়েত। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে উচ্চশিক্ষা নেয়ার স্বপ্ন পুরণ হয়নি তাঁর। নিজের স্বপ্ন ভাই ও সন্তানদের মাধ্যমে পূরণ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার সন্তানরা সবাই একে একে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই অনেকটা জেদ করেই ২০১৭ সালে ৫০ বছর বয়সে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর গত ১১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। সে পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন তাতে কী! দমে যাওয়ার পাত্র নয় বেলায়েত শেখ। আশাহত না হয়ে নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ার ইচ্ছা নিয়ে এবার পরীক্ষা দিবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে ৫০ পেরিয়ে পড়াশোনা শুরু করার বিষয়টি ভালোভাবে মেনে নেয়নি সমাজ। এ নিয়ে অনেকের ‘হাসি-ঠাট্টার’ শিকার হতে হয়েছে তাকে। পরে ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হয় বলে জানিয়েছেন বেলায়েত শেখ। তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে এটি আমার জন্য কিছুটা কঠিনই ছিল। কারণ, তখন কাছের মানুষেরাও আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতেন। যদিও একটা পর্যায়ে গিয়ে সেটি ঠিক হয়ে যায়।

বেলায়েত শেখ বলেন, উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আক্ষেপ থেকে স্বপ্ন তৈরি হয় পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার। তাই ৫৫ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণে প্রস্তুতি নিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা শাখায় ভর্তি হয়। গত মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। কিন্তু পাস করতে পারেননি তিনি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বয়সের কারণে আগে থেকেই অবহিত করেছিলেন ভর্তি হতে পারবেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে বেলায়েত বলেন, যেহেতু আমি দৈনিক করতোয়া পত্রিকায় শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। তাই আমি সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ে নিজেকে ঋদ্ধ করতে চাই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, একটি দৌড় প্রতিযোগিতায় যদি পিছুটান থাকে তাহলে কতটুকু এগিয়ে যাওয়া সম্ভব সেটা সকলেই জানে। তারপর আবার গত ১৭দিন থেকে আমি অসুস্থ। এই শরীর নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যাবো। চেষ্টা করে দেখি সাগরের মধ্যে কতটুকু সাতার দিতে পারি।

উল্লেখ্য, বেলায়েতের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুরে উপজেলায়। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। বিবাহিত বড় ছেলে ব্যবসা করছেন। ছোট ছেলে শ্রীপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। বড় ছেলের স্ত্রীও পড়ছেন একাদশ শ্রেণিতে। তিনি দৈনিক করতোয়া পত্রিকার শ্রীপুর উপজেলা প্রতিনিধি।

 

এসআই/


 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন