জাতীয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাংকক সফরে কী পেলো ঢাকা?

থাইল্যান্ডে ছয়দিনের সরকারি সফর শেষে মঙ্গলবার(২৯ এপ্রিল)  দেশে ফিরেছেন  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা গত ২৪ এপ্রিল বিকেলে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক পৌঁছান। তাঁর এই সফরে একটি চুক্তিসহ বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে। কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা বোলছেন, চুক্তিটি আগেই হওয়া উচিত ছিলো। অর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে সরকার সফল হলে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি কমে যাবে। পাশাপাশি বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের  সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে।

থাইল্যান্ড সফরকালে গত ২৬ এপ্রিল গভর্নমেন্ট হাউসে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও থাই প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের উপস্থিতিতে পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক নথি সই হয়।নথিগুলো হচ্ছে-: একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং একটি অভিপ্রায় পত্র।

সমঝোতা স্মারকগুলো হলো-জ্বালানি সহযোগিতা, শুল্ক বিষয়ে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তা এবং পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক। আর অভিপ্রায় পত্রটি হচ্ছে ২০২৪ সালের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা সংক্রান্ত।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যাংকক সফরে একটি মাত্র চুক্তি হয়েছে- যেটি সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত। এই চুক্তি সই হওয়ায় অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য থাইল্যান্ড যেতে এখন আর ভিসা প্রয়োজন হবে না। তবে এই চুক্তিটিকে ‘উল্লেখযোগ্য’ বলে মনে করছেন না সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন।

বায়ান্ন টিভিকে তিনি বলেন, ‘সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি অনেকে দেশেই আছে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা ২৩ দিশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারেন। থাইল্যান্ড এই তালিকায় নতুন যোগ হলো। চুক্তি হওয়ায় ভালোই হলো- আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেলো। তবে এটাকে বড় বা উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে দেখছি না। আগে ভিসা ছাড়া জাপানে ৯০ দিন এবং থাইল্যান্ডে ৩০ দিন অবস্থান করতে পারতেন কূটনীতিকরা। চুক্তি হওযায় এখন তাদের  এবং অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের  থাইল্যান্ড যেতে ভিসা লাগবে না।’

প্রধানমন্ত্রীর ব্যাংকক সফরে ঢাকা কী পেলো এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের পেশাদার এই কূটনীতিক বলেন, ‘সফরটি ছিলো রুটিন মাফিক। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিনিয়োগ, পর্যটন, জ্বালানি, স্থল ও সমুদ্র সংযোগ, উন্নয়ন প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। এই বৈঠকের আলোকে যৌথভাবে কাজ করলে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

তবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী।বায়ান্ন টিভিকে তিনি জানান, ‘অনেক দেশের অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি চুক্তি রয়েছে।বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি চুক্তি হওয়ার ফলে উভয় দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর হবে। এর ফলে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও প্রশিক্ষণে সরকারী কর্মকর্তারা সময়মতো যোগদান করতে পারবেন।’

বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। ব্যাংক অব থাইল্যান্ডের এক হিসেব বোলছে, ২০২৩ সালে থাইল্যান্ড থেকে বাংলা দেশ ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন বা ১১৮ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। একই সময়ে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে মাত্র ৯০ মিলিয়ন বা ৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য।

গত ২৬ এপ্রিল থাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর শেখ হাসিনা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, চলতি বছরই থাইল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সই হবে।

ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা এফটিএ  চুক্তিটি দেশের জন্য খুবই দরকার বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অবুল হাসান চৌধুরী। বায়ান্ন টিভিকে তিনি বলেন, ‘থাই প্রথানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে মুক্ত বাণিজ্য বিষয়টি উঠেছে এবং এবিষয়ে চুক্তির দিকে সরকার এগিয়ে যেতে পারলে দু’দেশের মধ্যকার  এই বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

থাইল্যান্ড সফরে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আইটি ভিলেজে বিনিয়োগের জন্য থাই ব্যবসায়ীদের অহবান জানিয়েছেন। চাইলে তাদের জন্য বিশেষ ইকোনমিক জোন করার প্রস্তাবও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এবিষয়ে থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত শাহেদ আখতার মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর অহবানে সাড়া দিয়ে থাই ব্যবসায়ীরা অমাদের দেশের জ্বালানি, পর্টন ও সমুদ্র খাতে বিনিয়োগ করলে উভয় পক্ষেরই লাভবান হওয়ার অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। আর ঢাকা ও ব্যাংককের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) হলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ঘাটতি কমে অসাসহ বাংলাদেশের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন