ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের অভিযান
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দখল করে রাখা অ্যাকাডেমিক ভবন দখলমুক্ত করতে অভিযান চালাচ্ছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে নয়টায় অভিযান শুরু করে পুলিশ।
বুধবার (০১ মে) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে হ্যামিলটন হল নামের ওই ভবনে তারা প্রবেশ করছে। সেখানে অবস্থান নেয়া বিক্ষোভকারীদের সবাইকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
এর আগে, কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলো।
অভিযানের বিষয়ে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে “দখল, ভাঙচুর ও অবরুদ্ধ করার পর আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না”।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন বিক্ষোভ হতে হবে শান্তিপূর্ণ এবং “জোর করে ভবন দখল করা শান্তিপূর্ণ ব্যাপার না- এটা ভুল”।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স টেলিভিশনকে দেয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে দিনটিকে কলাম্বিয়ার জন্য দুঃখের দিন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
নিউ ইয়র্ক শহরের ডেমোক্র্যাট দলীয় কংগ্রেসম্যান জামাল বাউম্যান কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এ অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতে তিনি ক্ষুব্ধ।
ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যক্তি ও কোম্পানিকে বয়কটের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই প্রচণ্ড ছাত্র বিক্ষোভ চলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
এর আগে কলাম্বিয়ার শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অনেকে কমলা ও হলুদ রংয়ের ভেস্ট পড়ে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন।
শিক্ষার্থীরা তাঁবু খাটিয়ে ওই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছিলো। ওই তাঁবু সরানোর জন্য সোমবার দুপুর পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিলো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দেয়া সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কয়েক ডজন শিক্ষার্থী ওই স্থানে সমাবেশ করে।
কলাম্বিয়ার স্টুডেন্ট রেডিও স্টেশনের খবর অনুযায়ী আটক শিক্ষার্থীদের নেয়ার জন্য ক্যাম্পাসের কাছেই নিউইয়র্ক পুলিশের বাস রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের টিভি চ্যানেলগুলোতে যেসব ছবি দেখানো হচ্ছে তাতে কলাম্বিয়া লেখা টি শার্ট পরিহিত অনেককে একই ধরনের বাসে ওঠাতে দেখা যাচ্ছে।
তবে কত শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন তারা রাতের এ অভিযানে শুধুমাত্র ফ্ল্যাশব্যাং গ্রেনেড (যা জোরে শব্দ তৈরি করে আলোর ঝলকানি তৈরি করে) ব্যবহার করেছে এবং কোনো টিয়ারশেল ব্যবহার করেনি।
একদিকে গ্রেপ্তার চলছে অন্যদিকে বাইরে চরম বিশৃঙ্খলার তথ্য দিয়েছেন বিবিসির নমিয়া ইকবাল। তিনি পুলিশের অনেকগুলো বাস ‘সম্ভবত বিক্ষোভকারীদের’ নিয়ে চলে যেতে দেখেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির পার্টনার সিবিএস নিউজ বলেছে পঞ্চাশ জনের মতো আটক করা হয়েছে। তবে হাত বাঁধা অবস্থায় আটক শিক্ষার্থীরা যখন যাচ্ছিল তখন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীরা ব্যাপক স্লোগান দিয়েছে। মিজ ইকবালকে একজন বলেছেন এই গ্রেপ্তার শহরের জন্য লজ্জার।
গেলো ছয় মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের এ যুদ্ধে হোয়াইট হাউসের অকুণ্ঠ সমর্থনের বিরুদ্ধে এবং গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করতে শুরু করে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর তা ক্রমশ বিস্তৃত হতে থাকে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বলেছে, ষাটের দশকের শেষের দিকে ভিয়েতনামে আমেরিকার আগ্রাসনবিরোধী ছাত্র বিক্ষোভের পর সম্ভবত সবচেয়ে বড় ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে এবার।