আন্তর্জাতিক

তিন ভারতীয় নাগরিক আটক, যুদ্ধাংদেহী মনোভাবে ভারত-কানাডা!

ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর ইস্যুতে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত ও কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক। শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী এই নেতাকে ভ্যাঙ্কুয়াবারে গুলি করে হত্যার প্রায় ১১ মাস পর  তিন ভারতীয় নাগরিককে আটক ও অভিযুক্ত করেছে জাস্টিন ট্রুডো সরকার। এতে নয়াদিল্লি-অটোয়ার মধ্যকার  সম্পর্ক এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। অনেকটা ‘সাপে-নেউলের মতো সম্পর্ক’ বললেও ভুল হবে না।

আটক হওয়া করন ব্রার, কামাল প্রীতি সিং ও করন প্রীতি সিংয়ের বিরুদ্ধে বেআইনি হত্যা ও হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। শুধু তাই নয় কানাডিয়ান পুলিশ বলছে- তদন্ত অব্যাহত আছে এবং এর মধ্যে ভারত সরকারের যোগসূত্র থাকার বিষয়টিও রয়েছে।

কানাডিয়ান পুলিশের এ মনোভাবে ফুঁসে উঠেছে ভারত সরকার। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, অটোয়া তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য সরবরাহ করে কিনা তার জন্য নয়া দিল্লি অপেক্ষা করছে। অভিযুক্তরা কোনো গ্যাংয়ের হয়ে কাজ করতে পারে। তবে পুলিশ কী বলে তার জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগ, কানাডায় শিখ সন্ত্রাসবাদীরা ভারতবিরোধী প্রচার চালিয়ে আসছে। আর তাতে অনুমতি দিচ্ছে কানাডা। বিশেষ করে পাঞ্জাব থেকে যাওয়া গোষ্ঠী কানাডায় তৎপরতা চালাচ্ছে। নয়া দিল্লির অনুরোধ সত্ত্বেও, তাতে সাড়া দিচ্ছে না কানাডা সরকার।

নিজ্জর ইস্যুতে বেশ কয়েক মাস ধরেই ভারত-কানাডার মধ্যে শীতল যুদ্ধ চলছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতের নয়াদিল্লিতে জি-টুয়েন্টি সম্মেলনে এটি  প্রকাশ্যে আসে।  ওই সময়  কানাডার শিখ নেতা হারদিপ সিং নিজ্জর হত্যার ইস্যুকে নরেন্দ্র মোদির সামনে আনেন জাস্টিন ট্রুডো।  তবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেননি কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী। তাই মোক্ষম জবাব দিতে অটোয়ায় নিযুক্ত ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের প্রধানকে বহিষ্কার করা হয়।

অটোয়ার এই আচমকা সিদ্ধান্তে হতবাক হয়ে যায় নয়াদিল্লি। পাল্টা পদক্ষেপ নিতে দেরি করেনি দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। কানাডার একজন সিনিয়র কূটনীতিককে পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছেড়ে যেওয়ার নির্দেশ দেয় মোদি প্রশাসন।

কানাডা প্রবাসী আলোচিত শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর গত বছরের জুন মাসে খুন হন। হত্যার তিন মাস পর কানাডা অভিযোগ করে,হরদীপকে হত্যার পেছনে ভারত সরকারের হাত রয়েছে। শুধু তাই নয়, অটোয়ায় ‘র’ এর  কর্মকর্তা পবন কুমারের বিরুদ্ধে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। তবে নিজ্জর হত্যার পেছনে  ভারত জড়িত নয় বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন নরেন্দ্র মোদি।

ভারতের উত্তরাঞ্চল ও পাকিস্তানের কিছু অংশের সমন্বয়ে স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ছিলেন হরদীপ। ভারতে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে নয়াদিল্লি। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন শিখ নেতা নিজ্জর।

হরদীপের এই খুন হওয়া স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি কানাডা সরকার। হাউজ অব কমন্সে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, নিজেদের মাটিতে একজন কানাডিয়ান নাগরিকের হত্যায় বিদেশি কোনো সরকারের সংশ্লিষ্টতা তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।

হরদীপের এই শিখ রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা ভালভাবে নেয়নি মোদি প্রশাসন।  ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী ওই শিখ নেতাকে আশ্রয় দেওয়ায় অটোয়ার সমালোচনা করে নয়াদিল্লি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কানাডা দীর্ঘসময় ধরে ভারতের নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরুপ ‘খালিস্তানি সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের’ আশ্রয় দিয়ে আসছে।

ভারতের পাঞ্চাব অঞ্চলে শিখদের স্বাধীন দেশ খালিস্তানের পক্ষে প্রচারণা চালাতেন হরদীপ। শুধু তাই নয়, স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের ইস্যুতে ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের সারেতে গত সেপ্টেম্বরে গণভোট আয়োজন করতে চেয়েছিলেন  প্রভাবশালী ওই শিখ নেতা। এর আগে, অন্টারিও প্রদেশেও গণভোট আয়োজন করেন তিনি।

হরদীপের এই শিখ রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা ভালভাবে নেয়নি মোদি প্রশাসন।  ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী ওই শিখ নেতাকে আশ্রয় দেওয়ায় অটোয়ার সমালোচনা করে নয়াদিল্লি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কানাডা দীর্ঘসময় ধরে ভারতের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি স্বরুপ ‘খালিস্তানি সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের’ আশ্রয় দিয়ে আসছে।

নিজ্জর ইস্যুতে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার ঘটনায় ভারত ও কানাডার দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিশেষ করে বাণিজ্যিক সম্পর্কে ভাটা পড়েছে। দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া  মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করেছে কানাডা সরকার।

এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করায় দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বেশ উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে ভারত ও কানাডার এই যুদাংদেহি উত্তেজনা প্রশমণে চেষ্টা চালাচ্ছে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন