আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

বাসে ডাকাতি-ধর্ষণের বাজেট পাঁচ হাজার টাকা

    টাঙ্গাইলে বহুল ঈগল এক্সপ্রেস নামে বাসে দুর্ধর্ষ ডাকাতি ও ধর্ষণ চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী  মোঃ রতন হোসেনসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব। চক্রেরে অপর সদস্যরা হচ্ছে,  মোঃ আলাউদ্দিন  মোঃ সোহাগ মন্ডল, খন্দকার মোঃ হাসমত আল,  মোঃ বাবু হোসেন জুলহাস,  মোঃ জীবন,  মোঃ আব্দুল মান্নান,  মোঃ নাঈম সরকার,  রাসেল তালুকদার,  মোঃ আসলাম তালুকদার রায়হান।  উদ্ধার করা হয়েছে ২০টি মোবাইল, ২টি রূপার চুড়ি, ১৪টি সীমকার্ড ও ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি ক্ষুর। এর আগে ডাকাতির পরের দিনই রাজা মিয়া নামে আরেকজনকে এই ডাকাতির অভিযোগে গ্রেফতার করেছিলো টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

                                                       ডাকাতির খরচ পাঁচ হাজার টাকা

    সোমবার (৮ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেফতারকৃত রতন মিয়া ওই বাস ডাকাতির ৩ দিন আগে সহযোগী ডাকাত রাজা মিয়াকে ডাকাতির প্রস্তাব দেয়। রাজা মিয়া অন্যান্য ডাকাতদের সংঘটিত করে। ডাকাতিতে রতনের নেতৃত্বে মোট ১৩ জন  অংশ নেয়। মূল পরিকল্পনাকারী রতন ডাকাতির প্রস্তুতির খরচ হিসেবে পাঁচ হাজার টাকার একটি তহবিল গঠন করে। রতন ২ আগস্ট রাতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মোড়ের একটি দোকান থেকে ৪টি চাকু, ২টি কাঁচি ও ০১টি ক্ষুর সংগ্রহ করে।

                                                          যেভাবে ডাকাতি শুরু 

    তারপর ২ আগস্ট রাত ১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাস সিরাজগঞ্জ রোড মোড়ে পৌছালে ডাকাত রাজা বাসটিকে থামার সংকেত দেয়। সেখানে যাত্রীবেশে রতন, রাজা, মান্নান ও নুরনবী বাসটিতে উঠে। পরে আরো রাস্তায় দুই ধাপে ডাকাত চক্রের অন্য সদস্যরা বাসটিতে যাত্রীবেশে আরোহন করে। বাসটিতে ২৪ জন সাধারণ যাত্রী ছিলো। কৌশলগত কারনে ডাকাতদের বেশীর ভাগই বাসের পেছনের দিকে বসে। বাসটি বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু এলাকা অতিক্রম করার সময় আউয়াল ডাকাত ধূমপানের কথা বলে বাসের গেটের কাছে যায়।  অন্যান্যদের ইশারা প্রদান করলে রাজা, রতন, মান্নান ও নূরনবী ড্রাইভিং সীটের কাছে গিয়ে ড্রাইভারকে মারধর করে এবং ডাকাত রতন বাসের ড্রাইভিং সীটে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। বাকি সদস্যরা বাসের চালক ও সুপারভাইজার, হেলপারসহ অন্যান্য সাধারণ যাত্রীদেরকে হাত মুখ বেঁধে সীট কভার দিয়ে মুখে মুখোশ পড়িয়ে মুখমন্ডল ঢেকে দেয়। তারা যাত্রীদের নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট এবং শ্লীলতাহানী ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়।

                                                           ডাকাতদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা

    পরবর্তীতে টাঙ্গাইলের হাটুভাঙ্গা মোড় হয়ে মধুপুরে যাওয়ার পথে রক্তিপড়া এলাকায় লুটকৃত মালামাল নিয়ে ডাকাতদের  মধ্যে বাক-বিতন্ডা শুরু হয়। তখন চালকের আসনে থাকা রতন পেছনে তাকালে বাসটি রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুটি ও বালুর সাথে বাসের ধাক্কা খায়।  নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একপাশে হেলে পড়ে। দ্রুত ডাকাতরা  বাস থেকে নেমে পড়ে। পরে অন্য একটি বাসে করে ডাকাতরা টাঙ্গাইলের মধুপুর যায়।

                                                           ডাকাতির মালামাল বন্টন

   মধুপুরের কুড়ালিয়া এলাকায় রতনের এক নিকটাত্মীয়ের ফাঁকা বাড়িতে গিয়ে ডাকাতদল লুন্ঠিত মালামাল নিজেদের মধ্যে বন্টন করে। তারপর ডাকাত রতন গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় আত্মগোপন করে। গ্রেফতারকৃত মান্নান, আলাউদ্দিন ও বাবু  আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকায় আত্মগোপন করে।  আসলাম, নাঈম, রাসেল প্রথমে নিজের এলাকায় ও পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ এলাকায় আত্মগোপন করে। ডাকাত জীবন কোনাবাড়ীতে আত্মগোপন করে। ডাকাত দীপু প্রথমে টাঙ্গাইলের পিরোজপুর গ্রামে ও পরবর্তীতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় আত্মগোপন করে। ডাকাত সোহাগ প্রথমে জিরানী বাজার ও পরবর্তীতে জামালপুর জেলায় এবং পুনরায় জিরানী বাজারে আত্মগোপন করে।

                                                          ডাকাতদের আগের অপকর্ম

    গ্রেপ্তারকৃত রতন এক সময় গাড়ীর হেলপার ছিলো। তার বিরুদ্ধে আরো ডাকাতির অভিযোগ আছে। সে ২০১৮ সালে গ্রেফতারকৃত নূরনবী, জীবন ও অন্যান্য কয়েকজনকে নিয়ে সাভার পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতি করেছিলো। পরে রতন গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দেড় বছর পর জামিনে বের হয়। ২০২০ সালে আবরো গ্রেপ্তারকৃত নূরনবী, জীবন ও আউয়ালকে নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি অটোরিক্সা ছিনতাই করে। তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা জীবনকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রতন প্রায় ০১ বছর কারাভোগ করে। জামিনে বের হয়ে সে তার সিন্ডিকেট নিয়ে সাভার, গাজীপুর বা সিরাজগঞ্জ এলাকায় মহাসড়কে আরো বেশ কয়েকটি ডাকাতি করে।

    গ্রেপ্তারকৃত জীবন গাড়ির হেলপার পেশার আড়ালে কয়েকটি পরিবহন ডাকাতি করেছে। ইতোপূর্বে সে ২০১৮ ও ২০২০ সালে দুটি ডাকাতির মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে। সবশেষ ডাকাতিতে সে যাত্রীদের মালামাল লুটের দায়িত্বে ছিল।

গ্রেপ্তার মান্নান গাজীপুরের একটি গার্মেন্টস এ চাকুরী করত। সে ২০১৯ সালে আশুলিয়ার একটি চুরির মামলায় কারাভোগ করেছে।  তার নেতৃত্বে ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন গার্মেন্টসে চাকুরীরত গ্রেফতারকৃত আলাউদ্দিন, সোহাগ, বাবু, দীপু, রাসেল, রায়হান, নাঈম ঈগল এক্সপ্রেসে ডাকাতি করে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন