আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

বছরে পাচার হচ্ছে ৭৩ হাজার কোটি টাকার স্বর্ণ: বাজুস

প্রতিদিন চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধভাবে ২০০ কোটি টাকার স্বর্ণ দেশে আসছে। প্রায় পুরোটাই প্রতিবেশি দেশগুলোতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই পাচারকৃত স্বর্ণের অংক বছ‌রে দাঁড়ায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। জানালো বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।

শ‌নিবার (১৩ আগস্ট) সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন‌নের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেল‌নে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এন্টি স্মাগলিং অ্যান্ড ল’ এনফোর্সমেন্টের চেয়ারম্যান এনামুল হক খান দোলন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপব্যবহার করে প্রতিদিন সারা দেশের জল, স্থল ও আকাশ পথে প্রায় ২০০ কোটি টাকার অবৈধ স্বর্ণের অলংকার ও বার চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে। যা ৩৬৫ দিন বা বছর শেষে দাঁড়ায় প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা।

স্বর্ণ পাচার হওয়ায় বড় অং‌কের ডলার বি‌দে‌শে চ‌লে যা‌চ্ছে। দে‌শের ডলার সংক‌টের এটা অন্যতম কারণ।

এনামুল হক খান দোলন বলেন, ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্য বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির চরম আঘাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিপর্যস্ত। দেশে দেশে মার্কিন ডলারসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এরই প্রভাব পড়েছে স্বর্ণের বিশ্ববাজারে।

তিনি আরও ব‌লেন, সাম্প্রতিক সময়ে অব্যাহতভাবে মার্কিন ডলারের মাত্রাতিরিক্ত দাম ও সংকটসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার ঊর্ধ্বমুখী দাম এবং বেপরোয়া চোরাচালানের ফলে বহুমুখী সংকটে পড়েছে দেশের জুয়েলারি শিল্প। দেশে মার্কিন ডলারের দাম ১১৮ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বর্ণের বাজারে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিয়েছে চোরাকারবারিদের দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে স্থানীয় পোদ্দার বা বুলিয়ন বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হচ্ছে। পোদ্দারদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে স্বর্ণের পাইকারি বাজার। পোদ্দারদের সঙ্গে চোরাকারবারিদের সিন্ডিকেটের সম্পর্ক রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে স্বর্ণের বাজার অস্থিরতার নেপথ্যে জড়িত চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কাস্টমসসহ দেশের সব আইন- প্রয়োগকারী সংস্থার জোরালো অভিযান ও শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। স্বর্ণের বাজারে শৃঙ্খলা আনতে কঠোর অভিযানের বিকল্প নেই।

সংবাদ স‌ম্মেল‌নে বাজুস বেশ কিছু প্রস্তাব দেয়। এগু‌লো হলো- স্বর্ণ চোরাকারবারিদের চিহ্নিত করতে বাজুসকে সম্পৃক্ত করে পৃথকভাবে সরকারি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। পাশাপাশি চোরাকারবারিদের দমনে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে আরও কঠোর আইন করা। ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণের বার ও অলংকার আনার সুবিধা অপব্যবহারের কারণে ডলার সংকট ও চোরাচালানে কী প্রভাব পড়ছে, তা জানতে বাজুসকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে সমীক্ষা পরিচালনার প্রস্তাব ক‌রে‌ছে বাজুস। চোরাচালানে জব্দ সোনার ২৫ শতাংশ পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়।

সংবাদ স‌ম্মেল‌নে জুয়েলারি শিল্পের চলমান সংকট মোকাবিলায় গহনার মান উন্নয়নে হলমার্ক নীতিমালা ও ডায়মন্ড নীতিমালা প্রণয়নে সরকারের কাছে দাবি জানায় বাজুস। এছাড়া হলমার্ক ছাড়া কোনো অলংকার বিক্রয় করা যাবে না। যদি বি‌ক্রি ক‌রে অভিযুক্ত‌দের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জানা‌বে বাজুস।

তাসনিয়া রহমান

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন