লাইফস্টাইল

সন্তানকে ছোট থেকেই দায়িত্বশীল হতে যা যা করবেন মা-বাবা

ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে ছোট থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার পাঠ দেয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। না হলে পরবর্তী জীবনে মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে। এই অভ্যেস গড়ে তুলতে বয়স অনুযায়ী সন্তানকে ধাপে ধাপে বেশ কিছু দায়িত্ব পালন করতে শেখানো প্রয়োজন। বলেছেন পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ।

চলুন জেনে নেয়া যাক কোন বয়সে ছেলে-মেয়েকে কেমন দায়িত্ব দেবেন।

সাড়ে তিন-চার থেকে ছয় বছর

এই বয়সের শিশুরা বাইরের জগৎ বলতে স্কুলকেই বোঝে। তাই প্রথমে সেখানে থাকার জন্য তাকে স্বাবলম্বী করা প্রয়োজন। ব্যাগে যা যা জিনিস নিতে হবে, তা হাতের কাছে এনে দিতে পারেন বাবা-মা। তার পরে ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়ার দায়িত্ব সন্তানকেই দিতে হবে। এই বয়সে যে বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি, তা হল টয়লেট ট্রেনিং। কারও সাহায্য ছাড়াই শিশুটি টয়লেটে যেতে পারলে বাবা-মা অনেকটা স্বস্তি পান। পাশাপাশি টিফিন বা স্ন্যাক্স নিজে খাওয়া বা কাঁটা-চামচে করে খেতে শেখানোও জরুরি। কারণ স্কুলে এ সব নিজেকেই করতে হবে। জনপরিসরে কী ভাবে ঠিক আচরণ বজায় রেখে খাওয়াদাওয়া সারবে, তা জানা থাকলে বাড়বে সন্তানের আত্মবিশ্বাসও। এ ছাড়া পোশাক পরা, বোতাম লাগানো, চেন টানা, মোজা পরা, জুতোর ফিতে বাঁধার মতো কাজও শেখাতে হবে এই বয়সে। এতে ছোটরা যেমন কাজ শিখবে, তেমনই তৈরি হবে ফাইন মোটর স্কিল।

ছয় থেকে এগারো বছর

এই বয়সটা শিশুদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে যাওয়া, মানুষজনের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ে এই সময়ে। বাড়ে মানসিক চাহিদাও। এই সময়ে নিজের জিনিসের যত্ন নেয়ার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পেতে থাকে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ওদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পাঠ দিতে হবে।

পড়াশোনা: কোন বিষয় কীভাবে পড়তে হবে, তা ভাল করে বুঝিয়ে দিয়ে কিছুটা সময় স্বাধীন ভাবে পড়তে উৎসাহ দিতে হবে। বলে দিন, কিছুটা পড়া তাকে নিজেকেই করতে হবে। স্কুলের প্রজেক্ট, হোমটাস্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলি ভাল করে জেনে আসতে বলুন। অন্য অভিভাবকদের কাছ থেকে জানার সুযোগ থাকলেও সন্তানকে তা না বলাই ভাল। প্রয়োজনে একটি নোটবুক দিন যাতে সে বিষয়গুলি লিখে আনতে পারে। এতে বাড়বে সংগঠিত যাপনের অভ্যেস।

বাড়ির কাজ: বাড়ির মধ্যে ছোট ছোট কাজের দায়িত্ব দিন সন্তানকে। তাদের জানান, বড়দের মতো তাদেরও দায়িত্ব বাড়ির কিছু কাজ করা। পানির বোতল ভরা, বিছানা পরিষ্কার করা, দুধের প্যাকেট বা খবরের কাগজ গেটের কাছ থেকে নিয়ে আসার মতো কাজ সহজেই করতে পারবে এই বয়সের শিশুরা। আর একটু বড় হলে বাইরের ছোটখাটো কাজও দিন। এসব কাজের মাধ্যমে বাড়বে সামাজিক স্কিল।

মানসিক বৃদ্ধি: এই সময়ে বাচ্চাদের মনে নানা বিষয়ে তোলপাড় চলে। তারা বুলিংয়ের শিকার হয় অনেক ক্ষেত্রে। বাড়িতে খোলামেলা পরিবেশ রাখতে হবে, যাতে শিশু দ্বিধাহীন ভাবে বিষয়টি বড়দের জানাতে পারে। তৈরি করতে হবে কৃতজ্ঞতা বোধও। এতে তার মধ্যেও সাহায্য করার মানসিকতা তৈরি হবে।

বয়ঃসন্ধি

এই বয়সটা একাধিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়। পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিষয় পছন্দ করার সময়ে সন্তানের উপরে নিজেদের ইচ্ছে চাপিয়ে না দিয়ে তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন। কোন বিষয়, কেন সে পড়তে চায়, যুক্তি-সহ বলতে দিন সন্তানকেই। এই বয়সে যুক্তি-সহ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তৈরি হলে জীবনের পরবর্তী ধাপগুলোয় তাদের সুবিধা হবে।

সন্তানের মনে অভিভাবকদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করাও জরুরি। আশ্বাস দিন, কখনও অন্য খাতে খরচ কমালেও পড়াশোনার ক্ষেত্রে পূর্ণ সহায়তা পাবে। বাজারের লিস্ট তৈরি, ওষুধ কিনে আনা বা বাড়ির কাউকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার মতো দায়িত্বও দিতে পারেন। এ ছাড়া রাজনীতি, সামাজিক ঘটনা, খেলা এসব সম্পর্কে আলোচনার পরিসর তৈরি করতে হবে বাড়িতে। সন্তানের মতামত গুরুত্ব দিয়ে শুনুন।

এভাবেই সন্তানকে পরবর্তী জীবনের জন্য তৈরি করে দিতে হবে। তবে সন্তানকে ছোট থেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার অভ্যেস করানোর ক্ষেত্রে অনেক সময়ে বাধা হয়ে দাঁড়ান বয়ঃজ্যেষ্ঠরা। সে ক্ষেত্রে সন্তানের বাবা-মাকে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। বড়দের বোঝাতে হবে কেন এই অভ্যেস জরুরি।

কেএস/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন