ক্যাম্পাস

কোটা আন্দোলন: সরকারকে শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কারে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা। এর আগে বেলা আড়াইটার পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের দাবি দাওয়া সংবলিত স্মারকলিপিটি পেশ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

রোববার (১৪ জুলাই) বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশ করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এসব তথ্য জানান।

আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘সংস্কারের এখতিয়ার সরকারের। আইন বিভাগের মাধ্যমে সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা সরকারের আশ্বাস না পেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি চাই।’

এ সময় জনদুর্ভোগের মতো কর্মসূচি দিতে চান না উল্লেখ করে আন্দোলনকারীরা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা আমরা পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী কর্মপরিল্পনা দেবো। এ সময় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়। মামলা প্রত্যাহার না হলে কঠোর কর্মসূচিরও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

পরে আন্দোলনকারীরা সচিবালয় হয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে ফিরতে শুরু করেন।

এর আগে, রোববার দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে গণপদযাত্রা শুরু করে শাহবাগ-মৎসভবন হাইকোর্ট মোড় হয়ে গুলিস্তান জিপিওর সামনে প্রথম পুলিশি বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তারা বেরিকেড ভেঙে গুলিস্তান পাতাল মার্কেট সংলগ্ন মোড়ে আবারও বাধার মুখে পড়েন।

এখানে সবাই পৌঁছানোর পর আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আর সামনে এগোবেন না। এরপর যদি কেউ আগান তাহলে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলার দায়ভার তাকেই নিতে হবে। সমন্বয়করা বিশৃঙ্খলার দায়ভার নেবেন না। সবাই যার যার জায়গায় অবস্থান করুন।

পরে দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদসহ ১২ জনের একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতির কাছে যান। প্রতিনিধিদলে ছিলেন- নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, সার্জিস আলম, আরিফ হোসেন, হাসিব আল ইসলাম, উমামা ফাতেমা, রিফাত রশিদ, সুমাইয়া, আব্দুল হান্নান মাসুদ, মো. মাহিন সরকার, আব্দুল কাদের ও মেহেরান নিসা।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।

ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটাপদ্ধতি বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে নামেন।

টানা কয়েকদিন আন্দোলনের পর গেলো ৯ জুলাই কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। পরেরদিন হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে। তবে শিক্ষার্থীরা আপিল বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন