দেশজুড়ে

প্রতারণার মাধ্যমে কিডনি চুরি, দুই চিকিৎসকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

চট্টগ্রামে এক ব্যক্তির শরীর থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কিডনি চুরির অভিযোগে দুই চিকিৎসকসহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির শরীর থেকে টিস্যু নেয়ার কথা বলে কিডনি হাতিয়ে নেয়া হয়।

রেববার (১৪ জুলাই) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান জিনিয়ার আদালতে এ ঘটনায় মামলাটি করেন নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে কৃষক আবু বক্কর (৪৪)।

আদালত শুনানি শেষে মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন এ তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- ডা. রাজিব হোসেন (৪৫) তার পিতা ডা. রবিউল হোসেন (৮৩) ও তার স্ত্রী খালেদা বেগম। তারা মীরসরাই থানাধীন কাটাছড়া ৭নং ইউনিয়নের বাসিন্দা। থাকেন নগরীর চিটাগাং আই ইনফর্মারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্সের স্টাফ কোয়ার্টারে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ডা. রবিউল হোসেনকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে যেতে হবে। তার জন্য একজন বিশ্বস্ত অ্যাটেনডেন্টস প্রয়োজন। ডা. রবিউল হোসেনের ছেলে ডা. রাজিব হোসেনের অনুরোধে পূর্বপরিচিত আবু বক্করকে অ্যাটেনডেন্টস হিসেবে যাওয়ার অনুরোধ করলে তিনি রাজি হন। ২০১২ সালের ১০ মে সিঙ্গাপুর যাত্রা করেন। সঙ্গে ছিলেন মামলার তিন বিবাদী। সেখানে যাওয়ার ২-৩ দিন পর রবিউল হোসেনকে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

ভর্তির পর আবু বক্করকে ডা. রাজিব হোসেন বলেন, আমার বাবার অবস্থা ভালো নয়, তাকে সুস্থ করতে হলে কিছু টিস্যু দিতে হবে। শরীর থেকে টিস্যু দিলে তার কোন ক্ষতি হবে না বলে নিশ্চিত করলে আবু বক্কর টিস্যু দিতে রাজি হন। টিস্যু নেয়ার কথা বলে আবু বক্করকে ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি করে অপারেশন করানো হয়। ওই বছরের ৯ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করা হয়। এরপর ১৫ জুলাই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ডা. রবিউল হোসেনকে টিস্যু দিয়ে জীবন বাঁচানোর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বিবাদীদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠান চিটাগাং আই ইনফারমারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্সে চাকরি দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাদীকে শারীরিকভাবে অক্ষম উল্লেখ করে ওই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিন পর বাদীর শরীরে সমস্যা দেখা দিলে চলতি বছরের ২১ মে চিকিৎসকের পরামর্শে শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্রাসোনগ্রাফি করা হলে পরীক্ষায় ধরা পড়ে তার ডান কিডনি নেই। সার্জারির মাধ্যমে ডান কিডনি নিয়ে ফেলা হয়েছে।

বাদীর তখন সন্দেহ হয়, সিঙ্গাপুরে টিস্যু নেয়ার বদলে কিডনি নিয়ে রবিউল হোসেনকে শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। বাদী গত ২৩ মে স্ত্রীসহ বিবাদীদের খুলশী থানাধীন বাসায় গিয়ে কিডনি নিয়ে ফেলার বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তারা কোনও কথা বলতে রাজি হননি। পরে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩০ লাখ টাকা দিতে রাজী হন বিবাদীরা। পরে ওই টাকার জন্য গেলে তা না দিয়ে লাঞ্ছনা করা হয় বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে বাদী আবু বক্করের শরীর থেকে টিস্যু নেয়ার কথা বলে কিডনি নেয়া হয়েছে। এ অভিযোগে আদালতে তিন জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

এএম/

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন