জাতীয়

রাষ্ট্র সংস্কারে ৫ পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন

ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্র সংস্কারে পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনগুলো হলো—নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ।  তবে সংবিধান সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির গেজেট প্রকাশ এখনও বাকি রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সই করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা যায়।  

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন

এসআরও নম্বর ৩২৯-আইন/২০২৪-বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করে বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন’ নামে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে।

নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কমিশনের প্রধান করা হয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারকে। সদস্যদের মধ্যে স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ হিসেবে শিক্ষাবিদ ড. তোফায়েল আহমেদ, ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র বিশেষজ্ঞ হিসেবে নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থার সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ড. মো. আব্দুল আলীম, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও ওপিনিয়ন মেকার হিসেবে ডা. জাহেদ উর রহমান রয়েছেন।

পুলিশ সংস্কার কমিশন

এসআরও নম্বর ৩৩০-আইন/২০২৪-বাংলাদেশ সরকার জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে ‘পুলিশ সংস্কার কমিশন’ নামে পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন করা হয়েছে।

কমিশনের প্রধান করা হয়েছে সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেনকে। আর সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল, সাবেক বিভাগীয় কমিশনার ও যুগ্মসচিব মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক শেখ সাজ্জাদ আলী, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ মো. গোলাম রসুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা ও মানবাধিকার কর্মী এ এস এম নাসিরউদ্দিন এলান। এছাড়া কমিশনে আরও থাকবেন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

এস আর ও নম্বর ৩৩৩-আইন/২০২৪-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ নামে পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন করা হয়েছে।

কমিশনের প্রধান করা হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে। সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. রিজওয়ান খায়ের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএ ফিরোজ আহমেদ। এছাড়া কমিশনে থাকছে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিও।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন

এস আর ও নম্বর ৩৩১-আইন/২০২৪-সরকারের বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে ‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’ নামে পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন করা হয়েছে

কমিশনের প্রধান করা হয়েছে  সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান। সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সদস্য এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এমদাদুল হক, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সদস্য ফরিদ আহমেদ শিবলী, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং সদস্য সাবেক রেজিস্ট্রার সাইয়েদ আমিনুল ইসলাম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং মাজদার হোসেন বনাম রাষ্ট্র মামলার বাদী সদস্য মাজদার হোসেন। 

দুদক সংস্কার কমিশন

এস আর ও নম্বর ৩৩২-আইন/২০২৪-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বিদ্যমান দুর্নীতি দমন কমিশনকে কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবনার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন’ নামে কমিশন গঠন করা হয়েছে।

কমিশনের প্রধান করা হয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে। সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন-  সাবেক কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক মোস্তাক খান, ব্যারিস্টার দীন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন। এ ছাড়া কমিশনে থাকছে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিও।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে , কমিশনগুলো ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদনের সুপারিশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। এরপর পরামর্শমূলক মতবিনিময় করা হবে, যেখানে সমাজের সব পর্যায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।এভাবেই সংস্কারকাঠামো চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করেছে সরকার।

প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। এ সময় তিনি ছয় কমিশনের প্রধানদের নামও ঘোষণা করেন।

জেডএস/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন