আন্তর্জাতিক

গাজায় যুদ্ধের বর্ষপূর্তি

হামাস আরও অপ্রতিরোধ্য; ইসরাইলের সাফল্য ‘জিরো’!

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইল-হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ এক বছর পূর্ণ হলো।  বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বাহিনীর তাণ্ডবলীলায় গাজা আজ ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে।বছর শেষে এই যুদ্ধ আর গাজায় থাকেনি। বিস্তৃত হয়েছে লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক ও ইরানের ভূখণ্ডেও।যুদ্ধে ইসমাইল হানিয়া ও হাসান নাসারুল্লাহ নিহত হলেও ইসরাইল নির্মূল করতে পারেনি হামাস ও হিজবুল্লাহকে। তবে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে।এতে ফলাফল গেছে ফিলিস্তিনের পক্ষে। কারণ ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য পদ দেয়ার প্রস্তাব জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছে।

দীর্ঘদিনের অত্যাচার, নিপীড়ন আর শোষণের বদলা নিতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এদিন ইসরায়েলের সীমান্তে হামলা চালিয়ে হামাস যোদ্ধারা দেশটির ভূখণ্ডে প্রবেশ করে।  এসময় হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে ছিল তাদের মিত্র গোষ্ঠী প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদ-পিআইজের অন্তত এক হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা।  ইসরাইল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেই এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০৫ জন ইসরাইলিকে হত্যা করে। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।  সেইসঙ্গে জিম্মি হিসেবে ২৪২ জনকে গাজয় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। এই জিম্মিদেরও বড় অংশ বেসামরিক নাগরিক।

হামাসের হামলার জবাব দিতে একই দিন ইসরাইল বাহিনী গাজায় বিমান হামলা শুরু করে। পাশাপাশি চালায় স্থল অভিযান। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে প্রায় দশ হাজারের মত বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ। দীর্ঘ এক বছরে তাদের বর্বরতায় অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার মানুষ। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখে। আর নিজ ভূমিতে শরণার্থী হয়েছে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, হামাস নির্মূলে নেতানিয়াহু বাহিনী গাজায় অভিযান শুরু করলেও তাদের সাফল্য নেই বলা চলে।  বরং এসময় তারা খুইয়েছে প্রায় পাঁচশত সেনা। তবুও হামলা বন্ধের ন্যূনতম ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না তেলআবিবের পক্ষ থেকে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে পাত্তাই দিচ্ছেন না ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। উপরন্তু লেবাননে হামলা শুরু করেছে তাঁর বাহিনী। আর এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরানে হামলার। 

গাজা যুদ্ধে হামাসের সমর্থনে এগিয়ে আসে লেবাননের ইরানপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইসরাইলে চালায় রকেট হামলা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, হিজবুল্লাহদের স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বিমা্ন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে নেতানিয়াহু বাহিনী। তাদের চলমান হামলায় হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসারুল্লাহসহ দুই হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছেন।আহত হয়েছেন আরও ১০ হাজারের মতো। হামলার কারণে অন্তত দশ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে।  এবার শুরু করেছে স্থল অভিযান।হিজবুল্লাহর ডেপুটি কমান্ডার নাইম কাসেম এরই মধ্যে বলেছেন ইসরাইলের স্থল অভিযানের জন্য তারা প্রস্তুত এবং এই যুদ্ধ ‘দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে’।

হামাস-ইসরাইলের যুদ্ধের মধ্যেই গ্যালো জুনে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়েছে। প্রস্তাবে শর্ত হিসেবে রাখা হয়েছে ‘পরিপূর্ণ যুদ্ধবিরতি’, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি, মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ ফেরত দেয়া এবং ফিলিস্তিনি বন্দী বিনিময়। ইসরাইল ইতোমধ্যে প্রস্তাবে সম্মত আছে বলে রেজল্যুশনে উল্লেখ করা হয়।

গ্যালো এক বছর ধরে গাজার আকাশে বাতাসে লাশের গন্ধ, কয়েক শত গণকবর, মাটিতে অগ্নিনৃত্য আর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পরও ফিলিস্তিনবাসীর জন্য একটি সুসংবাদ রয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউরোপের তিন দেশ- স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে। ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য পদ দেয়ার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব একই মাসে পাস হয়েছে সাধারণ পরিষদে। তবে এই বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে এখনো ভোটাভুটি হয়নি।

গাজা যুদ্ধে ইসরাইল নৈতিকভাবে হেরে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ ফিলিস্তিনের পক্ষে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের শতাধিক দেশে। বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। পরে তা পঁচিশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ ও দ্বিরাষ্ট্রনীতির ওপর ভিত্তি করে সমস্যা সমাধানের পক্ষে কথা বলেছেন।

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন