ফিচার

‘টাইফয়েড মেরি’ এক অদৃশ্য আতঙ্কের উৎস

টাইফয়েড মেরি ছবি: প্রতীকী ছবি

উনিশ শতকের শুরুতে এক অদৃশ্য আতঙ্কের বিস্তার ঘটে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে।  সেই আতঙ্ক কেড়ে নিয়েছিলো শহরবাসীর রাতের ঘুম। একের পর এক মানুষ মৃত্যুর পর ঢলে পড়ছিলো। মরণঘাতি সেই আতঙ্কের জন্য দায়ী করা হয়েছিলো এক নারীকে। ওই নারী টাইফওয়েড নামে এক ধরনের জীবানু বহন করেন। মানুষের শরীরে ছড়িয়ে দিয়েছেন। 

অদ্ভুত চরিত্রের সেই নারী সম্পর্কে আজকের সত্য গল্প। তার নাম মেরি ম্যালন। ইতিহাসে তিনি পরিচিত ‘টাইফয়েড মেরি’ হিসেবে।

মেরির জন্ম ১৮৬৯ সালে, আয়ারল্যান্ডে। তিনি আমেরিকায় যান ১৮৮৩ সালে। 

সেখানে গিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন শুরু করেন তিনি। কিন্তু মেরি জানতেন না এক ভয়ানক জীবাণু বহণ করছেন তিনি।   

আমেরিকার সরকারি পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ১৯০৬ সালে শুধু নিউ ইয়র্ক শহরেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৪৬৭ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছে ৬৩৯। কিন্তু বাস্তবতা ছিল আরো করুন।  

১৯০৬ সালে, মেরি নিউ ইয়র্কের চার্লস হেনরি ওয়ারেন নামের এক ধনী ব্যক্তির পরিবারে রান্নার কাজ শুরু করেন। তখন থেকে ছড়িয়ে পড়ে ভয়ানক এই রোগ। হঠাৎ ওই ধনী পরিবারের সদস্যরা একে একে অসুস্থ হতে থাকেন। পরিবারের ১১ জনের মধ্যে ৬ জনই টাইফয়েডে আক্রান্ত হন। কিন্তু কেউই ধারণা করতে পারছিলো না রোগটা কোথা থেকে আসছে!  এই অবস্থায় ওই বাসা থেকে পালিয়ে যান মেরী। 

এমন অস্বাভাবিক বিষয়টি সম্পর্কে তদন্ত শুরু করেন জর্জ সোপার নামক এক জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী। অনেক ঘাটাঘাটি করে সোপার লক্ষ্য করলেন ওই বাড়িতে এক নারী বাবুর্চি কাজ করতেন। ওই নারী লম্বা-চওড়া, মেজাজি, চাপা স্বভাবে। তার নাম মেরি। মেরী বেশ নোংরা ও অপরিস্কার জীবন যাপন করবেতন। হাত ধোওয়ায় ছিলো তার অনীহা। মল-মূত্র ত্যাগের পর নিজেকে ঠিকমতো পরিষ্কার করতেন না। 

মেরি চাকুরীর ইতিহাস ঘেঁটে সোপার জানতে পারেন, তিনি মোট আটটি পরিবারের কাজ করেছিলেন। সেসব পরিবারের ২২ জন মানুষ টাইফওয়েড রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন মারা যায়। 

অনেক খোঁজাখুজির পর নিয়ইয়র্কের আরেকটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের চাকরীরত মেরীর খোঁজ পান সোপার। তখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে ধারালো চাকু নিয়ে সোপারের দিকে তেড়ে আসেন মেরী। পরে সরকারী স্বাস্থ্যকর্মীরা গিয়ে মেরীকে আটক করে।  

তারপর সোপার মেরিকে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে দেন। তার মল-মূত্র পরীক্ষা করান। এতে প্রমাণিত হয়, মেরীর শরীরে টাইফয়েডের ব্যাকটেরিয়া থিকথিক করছে। বার বার চিকিৎসাতেও তা দূর করা সম্ভব হয়নি। তবে আশ্বর্য্যজনক হলেও সত্যি মেরি টাইফয়েড সৃষ্টিকারী ‘সালমোনেলা টাইফি’ ব্যাকটেরিয়া তার শরীরে বহন করলেও নিজে একবারও আক্রান্ত হননি।  

২৮ বছর কোয়ারেন্টিনে থাকার পর, ১৯৩৮ সালের ১১ নভেম্বর ৬৯ বছর বয়সে মারা যান  ‘টাইফয়েড মেরি’। শেষ জীবনে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি। সেসময় চিকিৎসা করেও কোনো চিকিৎসাই মেরির শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর করতে পারেনি।  তবে তার জীবনেও টাইফওয়েড হয়নি। 

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন