এভাবে চলতে থাকলে দেশে আর রাজনীতি থাকবে না: জিএম কাদের
এভাবে চলতে থাকলে, দেশে আর রাজনীতি, রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল থাকবে না। টবে সাজানো ফুলের বাগানের মত কিছু দল থাকবে। যেমন, টবের ফুলে সৌরভ থাকে কিন্তু মাটির সাথে সম্পর্ক থাকে না। ঠিক তেমনি, মানুষের সাথে সম্পর্ক থাকবে না। বললেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
আজ মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) জাপার বনানী কার্যালয়ে এক যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জাপা প্রধান বলেন, দেশে বিরাজনীতিকরণ চলছে। এভাবে চলতে থাকলে, দেশে আর রাজনীতি, রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল থাকবে না। টবে সাজানো ফুলের বাগানের মত কিছু দল থাকবে। যেমন, টবের ফুলে সৌরভ থাকে কিন্তু মাটির সাথে সম্পর্ক থাকে না। ঠিক তেমনি, মানুষের সাথে সম্পর্ক থাকবে না, এমন দূর্বল কিছু রাজনৈতিক দল থাকবে। তাই, জবাবদিহিতাহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এভাবে চলতে দেয়া যায় না।
তিনি বলেছেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেশের মানুষ এখন আর নির্বাচনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। যারা ভোট করতে চায় তারাও জানে নির্বাচন করতে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয় না। নির্বাচন করতে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয়। তাই, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলো জনসাধারণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। একারনেই, সাধারণ মানুষও ভোটের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
জিএম কাদের বলেন, কাল বুধবার গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচন। অথচ সেখানে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা হামলা ও মিথ্যা মামলার কারণে ঘরে থাকতে পারছে না। সরকার সমর্থকরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড করে জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যে মামলা দিচ্ছে। হাজার-হাজার বহিরাগত সন্ত্রাসী ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। আবার প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসাররা সরকারি দলের আনুকূল্য পেতে ব্যস্ত হয়ে আছেন।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন চলছে, নেত্রকোনায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জাতীয় পার্টি নেতা আসমা আশরাফ এর উপর সন্ত্রাসী হামলা করেছে সরকার সমর্থকরা। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিলো। আবার, পিরোজপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে সহায়তা করার কারণে তুশখালী ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলামকে কিছু হয়নারীমূলক মিথ্যে মামলা দেয়া হয়েছে। কিছু দিন আগে এমন একটি মামলায় হাজিরা দিতে যাচ্ছিলেন সফিকুল ইসলাম। পথের মাঝে তাকে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে তার একটি পা বিচ্ছিন্ন করেছে সরকার সমর্থকরা। সে এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, দেশ দেউলীয়ত্বের দিকে যাচ্ছে। ৪ থেকে ১০ ঘন্টা পর্যন্ত লোডশেডিং-এ দেশের মানুষ অসহনীয় কষ্ট ভোগ করছেন। ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের স্থলে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তুতি আছে। কিন্তু, টাকার অভাবে জ্বালানী তেল কিনতে পারছে না সরকার। বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কমেছে কিন্তু টাকার অভাবে তাও কিনতে পারছে না সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল বিদ্যুত ব্যবস্থা সেপ্টেম্বর থেকে স্বাভাবিক হবে, এখন তারা বলছেন নভেম্বরে স্বাভাবিক হবে। কেউ জানে না কখন থেকে বিদ্যুত ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। তাই, দেশের মানুষ সরকারের কথায় আস্থা রাখতে পারছে না।
শ্রীলঙ্কার উদাহরণ দিয়ে জিএম কাদের বলেন, দেশটি দেউলিয়া হওয়ার আগে সে দেশে লোডশেডিং ছিল, ডলারের দাম বেড়েছিল, জ্বালানি তেল কিনতে পারেনি, আবার নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছিল অস্বাভাবিক হারে। ঠিক একই চিত্র বাংলাদেশে, এখানেও ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমছে, ডলারের অভাবে জ্বলানি তেল কিনতে পারছে না সরকার। বিদ্যুতের অভাবে শিল্প কলকারখানা চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না, উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এতে, কাজ হারিয়ে অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছে। টাকার দাম কমে যাওয়ার কারনে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুন। আবার শ্রীলংকার মতই মেগা প্রকল্পে লক্ষ-কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। একই সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।
জিএম কাদের বলেন, দেশের এমন অর্থনৈতিক বাস্তবতায় মানুষ সিমাহীন কষ্টে আছেন। সরকার ঘরে ঘরে চাকরী দেয়ার কথা বলে, ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টি করেছে। ১০ টাকা দামে চাল খাওয়াবে ঘোষণা দিয়েছিলো, এখন চালের কেজি ৭০ টাকা। এমন দুঃসহ অবস্থা থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়।
বিপ্লব আহসান