আন্তর্জাতিক

ব্রিটিশ এমপি ডেভিড ডগলাস

টিউলিপ ততটা ভালো মেয়ে নন যেভাবে সবাই মনে করে

যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক ছবি: সংগৃহীত

একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় বিতর্কের মধ্যেই গেলো ১৪ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন ব্রিটেনের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী ও সিটি মিনিষ্টার টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ। মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলেও টিউলিপকে নিয়ে সমালোচনা থামছেই না।

লেবার পার্টির এই সদস্যকে একজন ভাল ও সৎ ব্যক্তি হিসেবে ভাবা হলেও  ব্রিটেনের পার্লামেন্টে বিরোধী দল কনজারভেটিড পার্টির সিনিয়র নেতা ডেভিড ডগলাস সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, ‘তিনি ততটা ভালো মেয়ে নন, যেভাবে সবাই তাকে মনে করে।’

কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতার এমন মন্তব্যে নতুন করে তোপের মুখে পড়েছেন ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক। এই মন্তব্যের পর, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি তদন্ত এবং এমপি পদ থেকে পদত্যাগের জন্য তার ওপর চাপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

রোববার(২৬ জানুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় টিউলিট সিদ্দিককে পার্লামেন্টের এমপি হিসেবে পদত্যাগ করার আহবান জানানোর পাশাপাশি চাপ সৃষ্টি করছে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির।

টিউলিপের বিরুদ্ধে লন্ডনে ফ্লাট উপহার নেওয়া, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ ওঠায় গেলো কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রিটেনের রাজনীতিতে উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। টিউলিপ ইস্যুতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও সমালোচনার ঝড় তোলেন আইন প্রণেতারা। সমালোচনার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন ব্রিটেনের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী ও সিটি মিনিষ্টার টিউলিপ সিদ্দিক। পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে এক বিবৃতিতে স্টারমার বলেছিলেন, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে তিনি টিউলিপের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেছেন।

টিউলিপের এই পদত্যাগের পর প্রচণ্ড তোপের মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সরকার।টিউলিপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারকে অভিযোগ তদন্তের জন্যস্টারমার সরকার সহযোগিতার প্রস্তাব দেবেন কিনা-বিষয়টিও পার্লামেন্টে তোলে কনজারভেটিভ পার্টি।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই টিউলিপের জন্য মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে এবার দলটির দাবি টিউলিপকে সংসদ সদস্য হিসেবে পদত্যাগ করতে হবে। গেলো বুধবারও টিউলিপের পদত্যাগের বিষয়টি পার্লামেন্টে তুলে ধরেন কনজারভেটিভ পার্টির  এক আইণ প্রণেতা।

ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপকে পদত্যাগের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে একটি পিটিশন দাখিল করেছে বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি।  পাশাপাশি টিউলিপের নির্বাচনি এলাকা হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেইটসহ লনডনের বিভিন্ন জায়গায় তার বিরুদ্ধে গণসংযোগ চালাচ্ছেন কনজারিভেটিভ পার্টির নেতাকর্মীরা। শুধু তাই নয়, ব্রিটেনের এই সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিবরণসহ লিফলেটও বিতরণ করছেন তারা।  ডেইলি মেইলের একটি রিপোর্টের রেফারেন্স দিয়ে ওই লিফলেটে বলা হয়, টিউলিপের বিরুদ্ধে তিন দশমিক নয় বিলিয়ন বা ৩৯০ কোটি পাউন্ড তহবিল তছরুপের অডিযোগ রয়েছে। 

কনজারভেটিভ পার্টির সিনিয়র নেতা ও ক্যামডেনের এমপি ডেভিড ডগলাস এ ইস্যুতে বলেন, টিউলিপকে দেখে সহজ সরল মনে হলেও, বাস্তবে এর ঠিক বিপরীত।

টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর এ নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিধিবিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাস তদন্ত করেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেন, তদন্তে টিউলিপের বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ওই চিঠিতে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কের কারণে সৃষ্ট সুনামের ঝুঁকি সম্পর্কে টিউলিপ সিদ্দিক আরও সতর্ক হতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, বিষয়টি দুঃখজনক। তিনি আরও উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্ত বাড়িগুলোর কর এবং অর্থায়ন ব্যবস্থার যথার্থতা প্রমাণে ব্যর্থ হওয়াটাও অনাকাঙ্ক্ষিত।

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন