গোটা বিশ্ব দেখবে আয়নাঘরের ছবি, ভারতীয় সাংবাদিক অর্ক দেব

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ বুধবার ঢাকায় গোপন বন্দিশালা ও নির্যাতন সেল হিসেবে পরিচিত ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করেছেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মী ও ভুক্তভোগীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ঢাকার উত্তরা, আগারগাঁও ও কচুক্ষেতের তিনটি স্পট পরিদর্শন করেন।
এ সময় ভুক্তভোগীরা নির্যাতনের ভয়াবহতার প্রতীক হিসেবে কচুক্ষেত বন্দিশালার দেয়ালগুলো দেখান। এছাড়া আগারগাঁও বন্দিশালায় একটি ইলেকট্রিক চেয়ার দেখানো হয় প্রধান উপদেষ্টাকে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় সাংবাদিক অর্ক দেব, যিনি ‘ইনস্ক্রিপ্টিডটমি’-এর সম্পাদক। অর্ক দেব এর আগে আনন্দবাজার ও নিউজ১৮ সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন।
আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে অর্ক দেব নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি সেখানকার একটি ইলেকট্রিক চেয়ারের ছবি শেয়ার করে লেখেন-
‘এই চেয়ারটা দেখে রাখা জরুরি। ফ্যাসিবাদের জননী শেখ হাসিনার আয়নাঘরের একটি কক্ষে রাখা এই চেয়ার (আগারগাঁও অঞ্চলে)। 'হাই ভ্যালু' বন্দিদের ইলেক্ট্রিক শক দিতে ব্যবহার হতো এই চেয়ার। ডিজিএফআই-এর কাউন্টার টেরোরিজম ইন্টিলিজেন্স ব্যুরো (সিটিআইবি) এই আয়নাঘরের দায়িত্বে ছিল। সারাক্ষণ একজস্ট ফ্যান চলত এই ঘরগুলিতে, ফ্যান বন্ধ হলেই কান্না আর গোঙানির শব্দ শুনতে পাওয়া যেত। আর কিছুক্ষণ। আজ থেকে গোটা বিশ্ব আয়নাঘরের সব ছবি দেখবে।’
অন্য এক পোস্টে অর্ক বলেন, এখানে বন্দি ছিলেন মাইকেল চাকমা
Mikel Chakma Lorbo লিখছেন:
‘প্রথম যে দুটো রুম দেখা যাচ্ছে ঠিক এই রুমগুলোর মধ্যে ১১৩ নাম্বার সেল যেটি একেবারে বাথরুমের পাশে এবং সেলের ভিতর ঢুকার সময় বাম সাইডের কোণায় একটি সিসি ক্যামেরা ২৪ ঘন্টা চালু থাকে, এই সেলে আমি আমি প্রায় ২ বছর বন্দি ছিলাম। একই লাইনের ১১৭ নাম্বার রুমে ছিলাম প্রায় দেড় বছরের একটু বেশী। নীচের রুমগুলোর মধ্যে ১০৪ নাম্বার রুমে ছিলাম এক বছরের কাছাকাছি। ১০৪ এর পরে ১০৫ নাম্বার সেল। এর পরে টয়লেট, বাথরুম ও চুল কাটার সেল। চুল কাটার সেল নাম্বার ১০৬। এছাড়া আরো অনেকগুলো রুমে আমাকে রাখা হয়।’
আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে, আওয়ামী লীগ শাসনামলকে ‘আইয়ামে জাহিলিয়াতের’ (অজ্ঞতার যুগ) সঙ্গে তুলনা করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি গুম কমিশনকে আয়নাঘর আবিষ্কারের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আইয়ামে জাহিলিয়াত বলে একটা কথা আছে না, গত সরকার এই আইয়ামে জাহিলিয়াতকে প্রতিষ্ঠিত করেছে সর্বত্র।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, শুধু ঢাকা শহর নয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা আয়নাঘরগুলোও খুঁজে বের করা হবে। তিনি আরও জানান, দেশে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ আয়নাঘর রয়েছে এবং জাতিসংঘের প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার নির্দেশে এসব ঘটনায় জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জেএইচ