পারিশ্রমিক ইস্যুসহ একাধিক বিষয়ে মুখ খুললেন মুনিম শাহরিয়ার

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে 'পার্টেক্স স্পোর্টিং ক্লাব’ এর বিরুদ্ধে পারিশ্রমিক ইস্যুর পাশপাশি একাধিক অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশি ক্রিকেটার মুনিম শাহরিয়ার। তিনি ২০২৩-২৪ মৌসুমে এই ক্লাবটির হয়ে খেলেছেন।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট করেন তিনি।
মুনিম জানিয়েছেন, পার্টেক্স তার পুরো পারিশ্রমিক পরিশোধ করেনি। এবং তার সম্পর্কে একাধিক মিথ্যাচার চালিয়ে আসছে। সেই ‘মিথ্যাচার’ এর জবাব তিনি তার এই ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন।
মুনিম শাহরিয়ারের পুরো ফেসবুক পোস্টটি পাঠকের জন্য দেয়া হলো:
‘আসসালামু আলাইকুম।
আমি মুনিম শাহরিয়ার। আশা করি সকলে ভালো আছেন। যারা আমাকে চেনেন এবং যারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী; তাদেরকে আমার ক্রিকেট জীবনের একটি বাজে অভিজ্ঞতা এবং আমার কিছু অব্যক্ত কথা বলতে চাই।
প্রফেশনাল ক্রিকেটার হিসেবে আমাদের জীবিকা ক্রিকেট খেলার উপর নির্ভর করে। জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি আমাদের একমাত্র লক্ষ্য থাকে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা এবং দেশের পতাকাকে বিশ্ব মঞ্চে সম্মানিত করা। আলহামদুলিল্লাহ, দেশের হয়ে বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করার সেই সৌভাগ্য আমার হয়েছে।
এবার ঘটনা প্রবাহে আসা যাক, আমি (২০২৩-২৪) মৌসুমে অনুষ্ঠিত 'ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ' ক্রিকেটে 'পার্টেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের' হয়ে খেলার প্রস্তাব পাই।
যারা ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত তারা অবশ্যই অবগত যে এই ক্লাবটি এতোটা প্রসিদ্ধ ক্লাব নয়, যেমনটা আবাহনী/মোহামেডান বা অন্যান্য ক্লাবগুলো । সদ্য জাতীয় দল থেকে অবস্থান হারানোতে স্বাভাবিকভাবেই আমি মনে করেছিলাম অপেক্ষাকৃত নিচুমানের ক্লাব হওয়ায় এই ক্লাবের হয়ে খেললে আমি সুযোগ বেশি পাবো এবং আমার জাতীয় দলে ফেরার পথ সহজতর হবে।
তবে বাস্তবতা হলো ক্লাব সংশ্লিষ্ট সকলের সুমিষ্ট ব্যবহারে আমি তাদের কুট কৌশল এবং অভ্যন্তরীণ মনো অপরিচ্ছন্নতা বুঝতেই পারিনি।
প্রাথমিকভাবে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিনিধি সাজ্জাদ সাহেব এবং তার ছেলে জারিফের সঙ্গে আমার কথা হয়। সিজন শেষ হবার পূর্বেই আমার পারিশ্রমিক পরিশোধের বিষয়ে তারা প্রতিশ্রুতি দেন।
খেলা চলাকালীন সময়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষ পারিশ্রমিকের ৫০% পরিশোধ করে। সিজন শেষ হওয়ার পূর্বেই তাদের শতভাগ পারিশ্রমিক পরিশোধের কথা ছিল।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর হতে চললো; অথচ ক্লাব কর্তৃপক্ষ আমার বাকি ৫০% পারিশ্রমিক পরিশোধ করেন নি। গত এক বছরে ক্লাব কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সাজ্জাদ সাহেব আমাকে ১০ থেকে ১২ টি তারিখ দিয়েছেন অথচ টাকা পরিশোধ করেনি।
বরং তিনি টাকা পরিশোধ না করার এক্সকিউজ হিসেবে নানা মিথ্যাচার ও অবমাননাকর কথা রটিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যদি এতো মিথ্যাচার না করতেন এবং হয়রানি না করে প্রথমেই বলে দিতেন টাকা পরিশোধ করবেন না; তবে হয়তো আমি আজকে এই লিখা লিখতাম না। নীরবেই সয়ে যেতাম এবং ক্ষমা করে দিতাম।
ইতিপূর্বে আমি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী লিমিটেড, গাজী গ্রুপ ক্রিকেটারস এবং লিজেন্ড অফ রুপগঞ্জ ক্রিকেট টিমের হয়ে খেলেছি। তারা যথা সময়ে পারিশ্রমিকের টাকা পরিশোধ করেছেন। এরকম সমস্যা বা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকার কখনো হইনি এবং পরিবেশ ছিল চমৎকার।
খেলার অঙ্গনে আসার পর এরকম অভিজ্ঞতা আমার এর আগেও হয়েছে। যেখানে ক্লাব কর্তৃপক্ষ পারিশ্রমিকের নির্ধারিত টাকা আমাকে পরিশোধ করেননি (কলাবাগান)। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই; কারণ পারিশ্রমিক পরিশোধ না করলেও তখন ক্লাব কর্তৃপক্ষ আমার সম্মানে আঘাত হানেনি। এ বিষয়গুলো আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিয়েছি। আমার কাছে টাকার চেয়ে সম্মান বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে আমি অসস্তিবোধ করছি পারটেক্স ক্লাব কর্তৃপক্ষের নানা অপপ্রচার এবং মানহানিকর মিথ্যাচারের তথ্য পেয়ে। পারিশ্রমিকের বাকি ৫০% পরিশোধের কথা বললে পারটেক্স ক্লাব কর্তৃপক্ষ আমার ব্যক্তিত্বের উপর আঘাত হানে।
পারটেক্স ক্লাবের সাজ্জাদ সাহেব বর্তমানে তিনি ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সর্বোচ্চ কর্তা ব্যক্তিদের সংগঠন 'সিসিডিএম' এর প্রভাবশালী সদস্য। ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর তিনি উক্ত পদ দখল করেন। জুলাই বিপ্লবের ফসল ঘরে তোলার পর বর্তমানে তিনি প্রভাব খাটিয়ে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে অপদস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কালিমা লেপনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাজ্জাদ সাহেবের কিছু মিথ্যাচার এবং এর জবাব:
১. মুনিম শাহরিয়ার জোর করে টিমে প্রবেশ করেছে, আমরা নেইনি।
উত্তর: আপনারা সকলে অবগত যে কোনো ক্রিকেটার ক্লাবের সম্মতি ছাড়া দল বদল করতে পারে না। যেখানে পারটেক্স ক্লাব কর্তৃপক্ষ আমাকে ক্যাপ্টেন্সির অফার দিয়েছিলো (অস্ট্রেলিয়া থেকে ফোন কলে সাজ্জাদ সাহেবের ছেলে জারিফ সাহেব) সেখানে এরকম প্রশ্ন অবান্তর এবং হাস্যকর। এ বিষয়ে অনেকেই প্রত্যক্ষ সাক্ষী রয়েছেন।
২. মুনিম শাহরিয়ার পারফরম্যান্স করেনি, তাই টাকা দেব না।
উত্তর: আমি আশানুরূপ পারফরম্যান্স করতে পারিনি। একজন ক্রিকেটার সব সময় ভালো পারফরম্যান্স করবে এমনটা ভাবার সুযোগ নেই। ক্রিকেটারদের ভালো বা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়েই যেতে হয়। কেউ ইচ্ছা করে খারাপ খেলে না। 'পারফরম্যান্স করেনি তাই টাকা দেব না' এরকম কথা আমরা গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে দেখতে পাই। অথচ আমরা কথা বলছি দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটকে নিয়ে; যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য লজ্জাজনক।
পারিশ্রমিক পরিশোধ না করলেও আমার কোন দুঃখ থাকতো না। কারণ এরকম পরিস্থিতির শিকার পূর্বেও হয়েছি। কিন্তু সাজ্জাদ সাহেব আমার ব্যাপারে নানা অসঙ্গতিপূর্ণ কথা ও মিথ্যাচার ক্রিকেট মহলে করে যাচ্ছেন।
যেহেতু তিনি ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট 'সিসিডিএম' এর দায়িত্বে আছেন সুতরাং তিনি সহজেই সকলকে তার মিথ্যাচারের দ্বারা প্রভাবিত করছেন । সাজ্জাদ সাহেবের মিথ্যাচারের প্রভাবে কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছি ক্রিকেট বোর্ড সংশ্লিষ্ট অনেকেই যারা আমার শুভাকাঙ্খী ছিলো তারা আমাকে ভুল বুঝছেন।
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত যেখানে আমার অবস্থান করতে হয়; সেই ক্রিকেটীয় সোসাইটিতে এরকম মিথ্যাচার ও অবমাননাকর কথা আমি মেনে নিতে পারছি না। এটা অবশ্যই আমার জন্য অসম্মানের এবং মানসিক পীড়াদায়ক।
আমি বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে চাই। হয়তো দেশের জন্য ভালো ভূমিকা ইতিপূর্বে রাখতে পারেনি; তবে আমি বিশ্বাস করি দেশের হয়ে ভালো কিছু করার সামর্থ্য এবং যোগ্যতা আমার আছে, ইন শা আল্লাহ। আমি আবারো লাল সবুজের জার্সিতে মাঠে ফিরতে চাই এবং সফলতার শিখরে পৌঁছাতে চাই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ।
এই কঠিন পথ পাড়ি দিতে প্রয়োজন একনিষ্ঠ মনোবল; যা আমার শতভাগ আছে, আলহামদুলিল্লাহ। আমি বিশ্বাস করি আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোন সাহায্যকারী নেই।
বি:দ্র: আমি আমার অবস্থান পরিষ্কার করলাম। আরো অনেক কিছু বলার ছিলো; কিন্তু এর থেকে বেশি কিছু বলা এখানে সমীচীন হবে বলে মনে করছি না। এ বিষয়টি আমি এখানেই শেষ করলাম এবং এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না।আশা করছি ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সকলে আমার অবস্থান বুঝতে পেরেছেন। সর্বদাই আপনাদের সকলের স্নেহ, দোয়া ও ভালোবাসায় আমাকে রাখবেন। ধন্যবাদ।।‘
এমএইচ//