আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশে দ্রুত অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচন চায় ভারত

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত সাজা চায় ভারত। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আবারও আহবান জানালো দেশটি। পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সব বিষয়ের নিষ্পত্তি করুক-তাও দেখতে চায় ভারত।

শুক্রবার(৭ মার্চ) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এসব কথা বলেন।

জয়সওয়াল বলেন, আমরা বারবার উল্লেখ করেছি হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা করার দায়িত্ব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের। আমি ফের একবার এই বিষয়ের উপর জোর দেব। একই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের জীবন, সম্পত্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষার দায়িত্ব সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের।

প্রেস ব্রিফিংয়ে এই প্রথম বারের মতো ভারতের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর ‘নির্যাতনের’ একটি খতিয়ানও দেওয়া হয়। মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সেই খতিয়ান নিয়ে বলেন,

‘আপনারা দেখেছেন ২০২৪ সালর বছরের ৫ আগস্ট থেকে এবছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৩৭৪টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের মামলা দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে সে দেশের পুলিশ  এক হাজার ২৫৪টি ঘটনা খতিয়ে দেখেছে। আর এসব ঘটনার ৯৮ ভাগই রাজনৈতিক মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারত চায় খুন, অগ্নি সংযোগ, হিংসার ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ না দিয়ে প্রতিটি ঘটনার যথাযথ ও পুঙ্কানুপুঙ্খ তদন্ত শেষে  অপরাধীদের সাজা দেওয়া হোক।’

বাংলাদেশে কবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এখনও দিনক্ষণ ঠিক করেনি। তবে সরকোরের পক্ষ থেকে  আসছে ডিসেম্বর কিংবা আগামী বছরে মার্চ মাসে ভোট হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের দাবি, এখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি ঠিক করতে নির্বাচনই একমাত্র পথ।ভারতের পক্ষ থেকেও অনেকটা একই সুরে কথা বলা হচ্ছে।

সাংবিধানিক বৈধতার কথা বলে ২০১৪ সালের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন, ২০১৮ সালের রাতের ভোট ও ২০২৪ সালে ‘ডামি’ প্রার্থীর নির্বাচনে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিল ভারত। এই নির্বাচনগুলোর পর ক্ষমতায় যাওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি সমর্থন ছিল নয়াদিল্লির। তবে এবার জোরালোভাবে বাংলাদেশে অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বলেছে ভারত।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের অবস্থান হলো-ভারত সব সময় স্থিতিশীল, প্রগতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের সমর্থক। চলমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ও গণতন্ত্র রক্ষায় দ্রুত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। ভারত চায়, তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সব বিষয়ের নিষ্পত্তি করুক।

গুরুতর অপরাধে আটক এবং সা্জাপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থীদের ছেড়ে দেওয়া বাংলাদেশের আইন শৃ্ঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। গুরুতর অপরাধে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী এবং উগ্রপন্থীদের ছেড়ে দেওয়ার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। চরমপন্থীরা মুক্তি পাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন।

শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের ঋণ ও সেই ঋণভিত্তিক প্রকল্পগুলো নিয়েও কথা বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।

জয়সওয়াল বলেন, সম্প্রতি আমাদের মধ্যে উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল ভারতে এসেছিল। আপনি জানেন এসব উন্নয়ন কর্মসূচি ভারতের অগ্রাধিকার। কিন্তু নানা কারণে অগ্রগতি ব্যাহত হওয়ায় দুই দেশ ঠিক করেছে, প্রকল্পগুলো যুক্তিযুক্ত করে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। তবে সেই সঙ্গে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুত সমর্থন ও প্রকল্প রূপায়ণে প্রয়োজনীয় অনুমতি দেওয়ার ওপর।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নতুন দল গঠন নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে  বিষয়টি এড়িয়ে যান অন্য প্রসঙ্গে কথা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন