শর্ত শিথিলে অনড় অবস্থান আইএমএফের, কিস্তি ছাড়ে অনিশ্চয়তা

চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অপ্রত্যাশিতভাবে কর বৃদ্ধি করে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের পূর্বাভাস দেয় সংস্থাটি। এরপর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগামী অর্থবছরের জন্য কর ছাড় কমানো এবং করের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে অতিরিক্ত ৫৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে বলে। তবে এনবিআর মনে করছে, এই পরিমাণ রাজস্ব আদায় বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই তারা আইএমএফের কাছে শর্ত কিছুটা শিথিল করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সংস্থাটি তা প্রত্যাখ্যান করে। ফলে আইএমএফের কাছ থেকে আগামী কিস্তির ঋণ ছাড়ের বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সোমবার (০৭ এপ্রিল) এনবিআরের চেয়ারম্যানসহ আলাদাভাবে কাস্টমস, আয়কর ও ভ্যাট অনুবিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেন আইএমএফের সফররত প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সেসব বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আগামী অর্থবছরের বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা কিভাবে আদায় হবে তা বৈঠকে জানতে চাওয়া হয়। আমরা বলেছি, এটি অসম্ভব।
তিনি আরও বলেন, আমরা তাদেরকে (আইএমএফের সফররত প্রতিনিধিদল) এটি কমাতে প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু তারা তাতে রাজি হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার (০৯ এপ্রিল) এনবিআরের তিন অনুবিভাগের সঙ্গে সংস্থাটির কর্মকর্তারা আবারও বৈঠকে বসবেন। তবে এ শর্তপূরণ ছাড়া সমঝোতা করা না গেলে ঋণের বাকি অর্থ ছাড়ও বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি দেখছেন একাধিক কর্মকর্তা।
তারা বলছেন, শর্ত শিথিল না হলে ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
এনবিআরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বাকি ৩ মাসে আদায় করতে হবে আরও ১ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা।
এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য আইএমএফ কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— বিলাসী পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো, বিভিন্ন খাতে যেসব কর অব্যাহতি রয়েছে তা চলতি জুনের পর বাদ দেওয়া এবং সব পণ্য ও সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা।
এর বাইরে প্রশাসনিক সংস্কার, রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা পৃথক করা, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়নের অগ্রগতি, আয়কর বিভাগের ডিজিটাইজেশন প্রকল্পের খসড়া প্রণয়নের অগ্রগতি, করপোরেট কর ও রিটার্ন অনলাইনে জমার সময়সীমা নির্ধারণও উঠে এসেছে প্রস্তাবনায়।
এনবিআরের সদস্য (আয়করনীতি) এ কে এম বদিউল আলম জানিয়েছেন, গত অর্থবছরে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ৭.৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৪ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মনে করে, বাংলাদেশের রাজস্ব আহরণের সক্ষমতা আরও বেশি রয়েছে। তাই সংস্থাটি তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ও শর্ত থেকে সরে আসছে না।
এদিকে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ৪৭০ কোটি ডলারের আইএমএফ ঋণ কর্মসূচির আওতায় তিনটি কিস্তিতে প্রায় ২২১ কোটি ডলার পেয়েছে। এখন সরকার আশা করছে, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে আগামী জুন মাসে ছাড় হবে।
এসি//