বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৩ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক চাপকে এই প্রবৃদ্ধি হ্রাসের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশিত হওয়া বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’এ এই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধির কারণে দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক প্রবৃদ্ধিও দুর্বল হয়ে পড়বে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াবে, যা আগের পূর্বাভাসের তুলনায় শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কম। ২০২৬ সালে এটি আবার ৬ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থা:
ভারত: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬.৫% প্রবৃদ্ধি, পরের বছর কিছুটা হ্রাস পেয়ে ৬.৩% হতে পারে।
পাকিস্তান: চলতি অর্থবছরে ২.৭% এবং ২০২৫-২৬ সালে ৩.১% প্রবৃদ্ধি।
শ্রীলঙ্কা: ঋণ পুনর্গঠনের কারণে ২০২৫ সালে ৩.৫% প্রবৃদ্ধি, তবে ২০২৬ সালে তা কমে ৩.১% হতে পারে।
নেপাল: প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪.৫% এবং পরের বছর ৫.২% প্রবৃদ্ধি।
ভুটান: কৃষি খাতে দুর্বলতার কারণে এ বছর ৬.৬% প্রবৃদ্ধি হলেও জলবিদ্যুৎ খাতে অগ্রগতির ফলে পরের বছর তা ৭.৬% হতে পারে।
মালদ্বীপ: বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কারণে ২০২৫ সালে ৫.৭% প্রবৃদ্ধি হতে পারে, যদিও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে।
আফগানিস্তান: আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় প্রবৃদ্ধি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২.৫% এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২.২% হতে পারে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকে আরও সহনশীল করতে হলে ঘরোয়া রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে হবে। ২০১৯-২০২৩ সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার গড় সরকারি রাজস্ব ছিল জিডিপির মাত্র ১৮%, যেখানে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই হার ছিল ২৪%।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় কর আদায় জিডিপির তুলনায় ১ থেকে ৭ শতাংশ কম, যা মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি ও কৃষি খাতের আধিপত্যের ফল। তবে কার্যকর নীতি ও ব্যবস্থাপনার অভাবেও এই ঘাটতি রয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওন্সর্জ বলেন, ‘নিম্ন রাজস্ব এই অঞ্চলের আর্থিক দুর্বলতার মূল কারণ এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তায় তা স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’
বিশ্বব্যাংক কর ব্যবস্থার সংস্কারে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছে:
কর ব্যবস্থার সরলীকরণ
ফাঁকফোকর বন্ধ করা
প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো
কর অব্যাহতি হ্রাস
পরিবেশ দূষণে কর আরোপ
প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বাণিজ্য সম্প্রসারণ, কৃষি খাত আধুনিকীকরণ এবং বেসরকারি খাতকে আরও সক্রিয় করা এখন সময়ের দাবি।
এসি//