লাইফস্টাইল

শিশুর শাসনের পরিবর্তে হাত বাড়ান বন্ধুত্বের

ছবি: সংগৃহীত

আজকের প্রজন্মের শিশুদের তুলনায় আমাদের শৈশব ছিল একেবারে অন্যরকম।  যেখানে ছিল না ইন্টারনেটের ছড়াছড়ি ,  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অসংখ্য টিভি চ্যানেল।  আমাদের শৈশব ছিল অনেকটা সীমিত ,  ছোট-ছোট আনন্দে ভরা।  কিন্তু আজকের শিশুদের জন্য পৃথিবীটা যেন আরও বড়, আরও উন্মুক্ত।  তাদের ইচ্ছা , আকাঙ্ক্ষা , আত্মবিশ্বাস সবই অনেক বেশি।  বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের নিয়ে আমরা মুগ্ধ।  তারা আমাদের তুলনায় অনেক বেশি স্মার্ট , বুদ্ধিমান ও স্বনির্ভর।

তবে শিশুদের পরিবর্তিত এই পৃথিবী আর আধুনিক মনোভাব নিয়ে অনেক অভিভাবকই চিন্তিত।  সন্তানদের বড় করার ক্ষেত্রে যেখানে আমরা শাসন , বকা কিংবা অযথা কড়াকড়ি দেখানোকে একটি ‘প্রত্যাশিত’ বিষয় হিসেবে মনে করি , সেখানে বাস্তবতা কিন্তু একেবারেই আলাদা।  অতিরিক্ত শাসন বা বকা আজকের শিশুর মনোভাব ও ব্যক্তিত্বের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।   

আমরা যখন ছোট ছিলাম , তখন একদম তুচ্ছ কারণে মা-বাবা , ভাই-বোনদের কাছ থেকে বকা খেয়ে মন খারাপ করতাম।  তবে একটু সময় পরেই সব কিছু ঠিক হয়ে যেত।  কিন্তু বর্তমান শিশুরা তার চেয়ে অনেক বেশি সংবেদনশীল।  অতিরিক্ত শাসন কিংবা বকা খেলে তারা চুপ করে থাকতে পারে , কিন্তু ধীরে ধীরে সেই চাপ তাদের ওপর বাজে প্রভাব ফেলতে শুরু করে।  বিশেষজ্ঞরা বলেন , একটানা অতিরিক্ত শাসন বারবার বকা খাওয়ার ফলে শিশুদের আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং মানসিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

গবেষণায় দেখা গেছে , যারা খুব কড়া শাসনের মধ্যে বেড়ে ওঠে তারা পরবর্তী জীবনে শারীরিক এবং মানসিকভাবে অস্থির থাকে।  তাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয় এবং অন্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে পারে।  এজন্য শিশুর শাসন করতে গেলে শুধু কঠোরতা নয় , দরকার মমতা , সহানুভূতি এবং ভালোবাসা।

যখন শিশুর প্রতি অতিরিক্ত শাসন বা বকা হয়, তখন তারা প্রায়ই ভুল সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে।  বকা খাওয়ার ভয়ে তারা মা-বাবার কাছ থেকে তথ্য লুকাতে শুরু করে।  কখনো কখনো মিথ্যা বলতে পারে।  বেশিরভাগ সময় দেখা যায় শিশুরা তাদের নিজের মতামত প্রকাশ করতে ভয় পায়। কিশোর বয়সে তাদের মধ্যে বিদ্রোহী মনোভাব গড়ে ওঠে এবং একসময় তারা মা-বাবার কথার প্রতি অনীহা দেখায়।  এই অতিরিক্ত শাসনের কারণে অনেক সন্তান মারামারির মতো পরিস্থিতিতেও জড়িয়ে পড়ে।

অথচ শৈশবের এই সময়টাতে সন্তানদের হাতে শাসনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় তাদের সৃজনশীলতা, মনোবল ও ভালো আচরণ।  এখনকার সন্তানরা বিশেষ করে কিশোররা শৈশবেই নিজেদের পৃথিবী গড়ে তোলে।  তাদের বন্ধুদের সঙ্গেই তারা নিজেদের খুশি এবং অভ্যস্ত।  আর অভিভাবক হিসেবে আমাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে , সেই পৃথিবীতে তারা যাতে হুমকির সম্মুখীন না হয় এবং ভালো বন্ধু নির্বাচনে সহায়তা করা।  সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে যদি তাকে অপদস্ত করা হয় , তা কখনোই ফলপ্রসূ হবে না।

আজকের সন্তানের মনের অগোচরে থাকা চাপ , ভয় বা তিক্ততা তাকে ভিতরে ভিতরে খারাপ অভ্যাস তৈরি করতে বাধ্য করবে।  তাই সন্তানের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে বোঝানো উচিত।  যে কোনো সমস্যার জন্য তাকে ধৈর্য সহকারে তার মা-বাবা , তার বন্ধুদের সহযোগিতা করা উচিত।  

অভিভাবক হিসেবে সন্তানকে প্রতিদিন চাপ না দিয়ে তার প্রতি বন্ধুত্বের মনোভাব পোষণ করুন।  একদম সোজাসুজি , স্নেহের ও ভালোবাসার মাধ্যমে তার পাশে দাঁড়ান।  তার পড়াশোনা , সৃজনশীল কাজ , শখ এবং খেলার ক্ষেত্রে তাকে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দিন।  কখনো যদি সে কোনো বিষয়ে পিছিয়ে যায় , তাহলে তাকে ধৈর্য সহকারে শেখান।  সন্তানের লেখাপড়ায় সহযোগিতা করুন , তবে অতিরিক্ত চাপ তৈরি না করে।

অন্তত সন্তানের শৈশবকে এমন একটি আনন্দময় সময় করতে হবে , যা তাকে পরবর্তী জীবনে সফল এবং আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করবে।  সন্তান যদি খেলতে চায় , তাকে খেলার সুযোগ দিন।  সৃষ্টিশীলতায় বাধা না দিয়ে তাকে নিজের প্রতিভা মেলে ধরার সুযোগ দিন।

তাদের শৈশবকে জীবনের সেরা সময় বানানোর জন্য , সন্তানের পাশে দাঁড়াতে হবে।  তার জীবনে কোনো ধরনের চাপের মধ্যে থাকতে দেবেন না। কঠোর শাসন না করে , ভালো বন্ধুর মতো তার পাশে থাকুন , তার সমস্যা বুঝুন এবং তাকে সঠিক পথ দেখান। মনে রাখবেন, সন্তানের সঠিক বিকাশের জন্য আপনিই সবচেয়ে ভালো শিক্ষক ।  তাহলে তাকে শাসন করার বদলে কেন বন্ধুত্বের মাধ্যমে সহানুভূতির হাত বাড়াবেন না? 

এসকে// 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন