টুকিটাকি

মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে বিধবা হলেন নৌসেনার স্ত্রী হিমাংশী

বিয়ে হয়েছিল মাত্র কয়েকদিন আগেই। এখনও শুকিয়ে যায়নি মেহেন্দির রঙ। তার আগেই ফিকে হয়ে গেল জীবন।

সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে বিনয় নারওয়াল গিয়েছিলেন মধুচন্দ্রিমায়। স্ত্রী হিমাংশি নরওয়ালকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন পহেলগাঁওয়ের বৈসরিণে। মঙ্গলবার দুপুরে সেখানেই হামলা হয়। ওই হামলাতেই অন্য আরও প্রায় ২৮ জনের সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়ালের।

বিয়ে উপলক্ষে মাসখানেকের জন্য ছুটি নিয়েছিলেন নৌসেনার লেফটেন্যান্ট বিনয় নরওয়াল। দিন সাতেক আগে ২৬ বছরের বিনয়ের সঙ্গে ২৪ বছরের হিমাংশী নরওয়ালের বিয়ে হয়। মধুচন্দ্রিমায় তাদের যাওয়ার কথা ছিল ইউরোপ। কিন্তু ভিসার জটিলতায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তাই ভূস্বর্গ কাশ্মীরে গিয়েছিলেন নবদম্পতি। মঙ্গলবার অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ে বন্দুক হামলায় প্রাণ হারালেন নৌসেনা লেফটেন্যান্ট। মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে বিধবা হলেন গুরুগ্রামের মেয়ে হিমাংশী।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিনয়ের হত্যার খবর পায় পরিবার। আকাশ ভেঙে পড়ে দুই পরিবারের মাথায়। ভয়ঙ্কর ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন হিমাংশী। তার একটি ভিডিও ভাইরাল সামাজিমাধ্যমে হিমাংশী বলেন, ‘আমরা দু’জন ভেলপুরি খাচ্ছিলাম। হঠাৎ এক জন এসেই বলল, ‘ও মুসলমান নয়, গুলি কর।’ সঙ্গে সঙ্গে গুলি চলে নৌসেনার লেফটেন্যান্টের উপর। তবে ছেড়ে দেয়া হয় হিমাংশীকে।

ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বছর তিনেক আগে নৌসেনায় যোগ দেন বিনয়। কেরলার কোচিতে কর্মরত ছিলেন তিনি। বাবা রাজেশ শুল্ক দফতরে কর্মরত। এখন পানিপথে কর্মরত। দাদু প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা। মা আশা দেবী বাড়ি সামলান। বিনয়ের বোন, সৃষ্টি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেই সূত্রে এখন দিল্লিতে থাকেন। হিমাংশীর বাড়ি গুরুগ্রামে। তিনি পিএইচডি করছেন। বাবা সুনীল কুমার কেন্দ্রীয় সরকারি কর্তকর্তা।

গুরুগ্রামে মাস দুয়েক আগে বাগ্‌দান হয়েছিল বিনয়-হিমাংশীর। বিয়ে হয়েছে গত ১৬ এপ্রিল। ১৯ এপ্রিল প্রীতিভোজের আয়োজন করেছিলেন দম্পতি। বিনয়ের পরিবারের এক সদস্যের কথায়, ‘ওরা মধুচন্দ্রিমায় ইউরোপ যাবে বলে কথা ছিল। কিন্তু ভিসা নিয়ে সমস্যা হয়। তাই জম্মু-কাশ্মীর গিয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘২১ এপ্রিল ওরা পহেলগাঁওয়ের একটি হোটেলে উঠেছিল। খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুরতে বেরিয়েছিল বৈসরন উপত্যকায়। সেখানেই জঙ্গির গুলিতে আমাদের বিনয় মারা গিয়েছে।’

আগামী ২৭ মে বিনয়ের জন্মদিন। ছেলে মধুচন্দ্রিমা থেকে ফিরে এলে বড় করে জন্মদিন পালনের পরিকল্পনা করেছিল পরিবার। কারণ, তার পরেই ছুটি শেষ হবে। আবার কাজে চলে যেতে হবে। জীবন্ত অবস্থায় আর বাড়ি ফেরা হল না বিনয়ের। তার দেহ আনতে বুধবার রওনা দিয়েছে পরিবার। সদ্যবিবাহিত দুই যুবক-যুবতীর পরিবারে শুধু বিলাপ আর হা-হুতাশ।

জেএইচ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন