১৭ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরলেন ডা. জুবাইদা রহমান

দীর্ঘ ১৭ বছর পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় পুত্রবধূ ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। দেশে ফিরে তিনি উঠছেন বাবার ধানমন্ডির বাড়ি ‘মাহবুব ভবন’-এ।
মঙ্গলবার (৬ মে) সকালে কাতারের আমিরের দেয়া বিশেষ রাজকীয় বিমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। ওই বিমানে চার মাস চিকিৎসা শেষে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সঙ্গে এসেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমানও।
ডা. জুবাইদার দেশে ফেরার খবরে কয়েকদিন ধরেই ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কের ‘মাহবুব ভবন’-এ চলছিল সাজসজ্জা ও গোছগাছের কাজ। এটি তার বাবা, সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের বাসভবন। বর্তমানে বাড়িটিতে থাকেন মাহবুব আলী খানের স্ত্রী সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু, বড় মেয়ে শাহীনা জামান এবং তার পরিবারের সদস্যরা। তবে সম্প্রতি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ওয়ান-ইলেভেনের রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে দেশ ছেড়েছিলেন জুবাইদা রহমান। ওই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে। মামলার রায়ে ঢাকার একটি আদালত জুবাইদাকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করে।
তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে আদালত তার সাজা স্থগিত করে, যার ফলে দেশে ফেরার পথ সুগম হয় জুবাইদা রহমানের। মঙ্গলবার সকালে শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরলেও, জুবাইদা রহমানের স্বামী তারেক রহমান ও একমাত্র মেয়ে জাইমা রহমান আপাতত লন্ডনেই রয়ে গেছেন। বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশানের ফিরোজায় গেলেও, শেষমেশ বাবার ধানমন্ডির বাড়িতেই উঠবেন তিনি।
সিলেটে জন্ম নেয়া জুবাইদা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করে ১৯৯৫ সালে বিসিএস পরীক্ষায় স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং সরকারি চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডনে গেলে সরকার তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। পরে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
জুবাইদার বাবা, রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান, ১৯৭৮ সালের ৪ নভেম্বর থেকে ১৯৮৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের সময় তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী তার চাচা।
পেশাগত জীবনে চিকিৎসক হলেও, বিয়ের পর রাজনীতির গহিন স্রোতে জড়িয়ে পড়েন জুবাইদা রহমান। মামলার ফাঁদ, কারাদণ্ড, চাকরিচ্যুতি- সব মিলিয়ে ঝড়ঝাপটার মধ্য দিয়ে কেটেছে জীবনের গত ১৭ বছর। অবশেষে দীর্ঘ নির্বাসনের ইতি টেনে তিনি ফিরে এলেন নিজের দেশের মাটিতে।
এসি//