লাইফস্টাইল

পড়াশোনায় সাফল্য : সঠিক কৌশলে সাফল্যের শিখরে পৌঁছান

পড়াশোনা শুধু দায়িত্ব নয় বরং, এক প্রকার শিল্পও। যখন পড়াশোনার কথা আসে অনেকেই মনে করেন যে শুধু ঘন্টার পর ঘন্টা বইয়ের সাথে বসে থাকা, মুখস্থ করা আর অ্যালার্মে ঘুম থেকে উঠলেই সব কিছু হয়ে যাবে। কিন্তু আসল কথা হল, সফলতা আসবে তখনই, যখন আপনি পড়াশোনার কৌশল পরিবর্তন করবেন এবং তা নিয়মিতভাবে অনুসরণ করবেন। এর সাথে সঠিক মনোভাব, আধুনিক শেখার কৌশল এবং নিয়মিত রিভিশন আপনাকে এগিয়ে নেবে।

আমাদের অনেকেরই অভ্যাস রয়েছে সকালে বই নিয়ে বসে পড়া, কিন্তু সেই পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই আমাদের মস্তিষ্কের বেশিরভাগ তথ্য হারিয়ে যায়। বিষয়টি কি আসলেই সমাধানযোগ্য? হ্যাঁ! আধুনিক মনোবিদেরা এবং শিক্ষাবিদরা বলছেন, পড়াশোনার কৌশলে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন আনলে আপনি সফল হতে পারবেন।

কিছুদিন আগেও অভিভাবকরা মনে করতেন, "জোরে পড়লে ভালো শিখা যায়", তবে বাস্তবতা এটি থেকে একটু ভিন্ন। শেখার ক্ষেত্রে ‘বোঝা’ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একবারে মুখস্থ করার চেয়ে, বিষয়টি বুঝে পড়া অনেক বেশি কার্যকরী। তাই পড়াশোনায় সফল হওয়ার জন্য এই সহজ পদ্ধতিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতিতে আপনি একেকটি বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করবেন এবং তার পরিণতি হবে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি।

লিখে শেখা : 

পড়ার সময় যদি আপনি লেখার অভ্যাস করেন, তা হলে মস্তিষ্ক আরও ভালোভাবে বিষয়গুলো মনে রাখবে। যখন আপনি কোনও কিছু পড়বেন এবং পরে সেটি লিখে বা টেস্ট দিয়ে দেখবেন, আপনার মস্তিষ্ক সেই বিষয়টিকে গেঁথে রাখে। নিয়মিত রিভিশন এবং লেখার অভ্যাসই পড়াশোনার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

এছাড়াও বাড়িতে প্রতিদিনের পড়াশোনার বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া বা ছোট ছোট প্রশ্নোত্তর প্রস্তুত করা খুবই কার্যকরী। এর মাধ্যমে আপনি একদিকে যেমন নিজেকে পরীক্ষা করবেন, তেমনি শেখার আনন্দও পাবেন। এবং সবশেষে, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে।

রিভিশন : 

আমরা জানি, অনেকসময় পড়া তথ্য কিছু দিন পর ভুলে যেতে হয়। তবে এই সমস্যা সমাধান করতে, রিভিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত সময়ে সময়ে পড়া বিষয় পুনরায় পড়ে আপনার মস্তিষ্কে সেগুলো আরও ভালোভাবে স্থির হয়ে যাবে। কিছু দিন পর যদি আপনি একটি বিষয় আবার পড়েন, আপনার মন নতুন করে সেটি মনে করবে। সুতরাং, কিছু দিনের পর পর নিয়মিত রিভিশন করুন, যাতে আগের ভুলে যাওয়া অংশগুলো ঠিক হয়ে যায়।

বড় বিষয়গুলিকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করুন : 

অনেক সময় বড় বা জটিল বিষয় পড়তে গিয়ে আমরা চাপে পড়ে যাই। কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক একবারে বড় বিষয় ধারণ করতে পারে না। সেক্ষেত্রে, বিষয়গুলো ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে পড়া খুবই উপকারী। এতে করে একে একে বিষয়গুলো আপনার মাথায় স্থিতি লাভ করবে। যতটা সময় একটি ছোট অংশে আপনি মনোযোগ দিবেন, ততটাই সেটি আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এটি পড়াশোনার ক্ষেত্রে একটি সেরা কৌশল।

অন্যকে শেখানো : 

আপনি যখন একটি বিষয় পুরোপুরি বুঝতে পারবেন, তখন সেটি অন্যকে শেখানোর চেষ্টা করুন। এমনকি এটি আপনার শেখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক। যখন আপনি কাউকে কিছু শেখানোর চেষ্টা করবেন, তখন আপনাকে নিজের শেখার বিষয়টি আরও গভীরভাবে বুঝতে হবে। পদার্থবিদ রিচার্ড ফিনম্যানের পদ্ধতি অনুযায়ী, শেখার সঙ্গে সঙ্গে সেই বিষয়টির সহজ ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা আপনাকে আরও ভালোভাবে বিষয়টি আয়ত্ত করতে সাহায্য করবে।

বাস্তবের সাথে সম্পর্কিত শেখা : 

শুধু বইয়ের পাতা নয়, বাস্তব জীবনের উদাহরণ বা মডেল ব্যবহার করলে বিষয়গুলো আরও সহজে বোঝা যায়। বিজ্ঞান এবং গণিতের মতো বিষয়গুলিতে যদি আপনি প্র্যাকটিক্যাল ডেমনস্ট্রেশন দেন বা মডেল ব্যবহার করেন, তবে শেখা অনেক বেশি কার্যকরী হবে। বাস্তব জীবনের সাথে তুলনা করলে, বিষয়গুলো মনের মধ্যে সঞ্চিত থাকে।

অনেক সময় একা পড়লে কিছু বিষয় অস্পষ্ট বা কঠিন হতে পারে। কিন্তু একটি ভালো শিক্ষক বা কোচ আপনাকে সেই বিষয়টি নতুন করে দেখে শেখাতে পারে। একজন ভালো গাইড আপনাকে পথ দেখাবে এবং আপনিও দ্রুত বুঝতে পারবেন। সঠিক নির্দেশনা ও পরামর্শ থেকে আপনি নিজের অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সফল হতে পারবেন।

পড়াশোনার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নিয়মিততা নয়, আধুনিক পদ্ধতি এবং সঠিক কৌশল মেনে চলাও অত্যন্ত জরুরি। আপনি যদি রিভিশন, লেখার অভ্যাস, সহজ ব্যাখ্যা, ছোট ছোট অংশে ভাগ করে পড়ার কৌশল এবং অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে পড়াশোনার ধারায় সঠিকভাবে এগিয়ে যান, তবে শিখতে কোনও সমস্যা হবে না। এইসব কৌশল শেখার প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকরী এবং আনন্দদায়ক করে তুলবে। অতএব, আর দেরি না করে আপনার পড়াশোনার পদ্ধতি পরিবর্তন করুন এবং শিখুন, সফল হন।

এসকে// 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন