লাইফস্টাইল

হঠাৎ মুড পরিবর্তন, মনের এক নীরব সংকেত

সকালটা দারুণভাবে শুরু হয়েছিল। প্রিয় গান কানে, মুখে হাসি, কাজে পূর্ণ উদ্যম। কিন্তু দুপুর গড়াতেই হঠাৎ যেন সবকিছু পাল্টে গেল অকারণে অস্বস্তি, অল্প কথায় রাগ, মনের ভেতরে ভারী এক ক্লান্তি। অনেকেই একে বলেন "স্ট্রেস", কেউ বলেন "পিরিয়ডের আগে এমন হয়"। কিন্তু এই আচমকা পরিবর্তনের পেছনে থাকতে পারে আরও গভীর কোনও সংকেত যা শুধু আবেগের ব্যাপার নয় বরং, একটি সুস্পষ্ট মানসিক বা শারীরিক সমস্যা।

এই অবস্থার নাম Premenstrual Dysphoric Disorder (PMDD)—একটি হরমোন-সংবেদনশীল মেজাজসংক্রান্ত রোগ, যা বিশ্বজুড়ে ৩-৮ শতাংশ প্রজননক্ষম নারীদের প্রভাবিত করে। অনেক সময় এটি ধরা পড়ে না, আবার কখনও ভুলভাবে ‘হতাশা’ বা ‘বাইপোলার ডিসঅর্ডার’ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

PMDD কি? PMS থেকে কতটা আলাদা

প্রচলিত PMS (Premenstrual Syndrome) নারীদের পরিচিত পিরিয়ডের আগে মাথাব্যথা, অস্বস্তি, হালকা মুড সুইং ইত্যাদি। কিন্তু PMDD হলো PMS-এর অনেক বেশি তীব্র রূপ।

PMDD-এর সাধারণ লক্ষণগুলো হলো :

• হঠাৎ বিষণ্ণতা, হতাশা

• অকারণ রাগ, চরম আবেগপ্রবণতা

• আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি

• ঘনঘন কান্না বা নিঃসঙ্গতা

• ঘুমের ব্যাঘাত, উদ্বেগ

• এমনকি আত্মহত্যার চিন্তাও

এই অবস্থার পেছনে কাজ করে শরীরের হরমোন পরিবর্তনের প্রতি মস্তিষ্কের অতিসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে সেরোটোনিন ও GABA নামক নিউরোট্রান্সমিটার যখন ব্যালেন্স হারায়, তখন মনের ওপর প্রভাব পড়ে।

বিভ্রান্তিকর বিষয় হলো এই পরিবর্তনগুলোকে অনেক সময়ই আবেগগত দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সত্যি হলো, এটি শরীরের একটি প্রতিক্রিয়া—যা মুখে কিছু না বলে, আচরণের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করে।

এটি বুঝতে পারলে, নারীরা শুধু নিজেকে ভালোবাসতেই শেখেন না নিজের যত্ন নিতে শেখেন।

PMDD-এর চিকিৎসা কি সম্ভব 

হ্যাঁ সম্ভব এবং দিন দিন এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে। উপযুক্ত চিকিৎসা ও লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

PMDD ব্যবস্থাপনায় কার্যকর পন্থা :

• SSRI ওষুধ: যেমন ফ্লুক্সেটিন, সার্ট্রালিন, যেগুলো মুড স্ট্যাবিলাইজ করতে সহায়তা করে।

• CBT (Cognitive Behavioral Therapy): মানসিক চাপ মোকাবেলায় প্রশিক্ষিত থেরাপি।

• হরমোন নিয়ন্ত্রণে পিল: অনেক সময় হরমোনাল ওঠানামা কমাতে সহায়তা করে।

• সুস্থ জীবনযাপন: পর্যাপ্ত ঘুম, ক্যাফেইন মুক্ত ডায়েট, হালকা ব্যায়াম।

• মেডিটেশন ও মাইন্ডফুলনেস: মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে কার্যকর।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ‘American Psychiatric Association’ স্বীকার করেছে যে PMDD একটি বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত মানসিক সমস্যা, যা সহানুভূতি ও সঠিক চিকিৎসায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

মুড পরিবর্তন মানেই দুর্বলতা নয়। বরং এটি শরীর ও মনের মাঝে একটি সেতু, যা জানান দেয় সব ঠিকঠাক নেই। এ সংকেত বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব নিজেরই।

সব নারীর জীবনেই মাঝে মাঝে এমন মুহূর্ত আসে, যখন হাসিমুখের আড়ালে থেকে যায় না বলা অনেক কথা। সেই কথাগুলোর উৎস খুঁজতে গিয়ে কেউ হয়তো PMDD-এর মুখোমুখি হবেন, আবার কেউ নিজের শরীরকে আরও গভীরভাবে জানতে শুরু করবেন।

সূত্র :

• বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)

• আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন

• দ্য টাইমস

• টাইম

• পিএমসি (পাবমেড সেন্ট্রাল)

• ভেরিওয়েল হেলথ

• ডেইলি টেলিগ্রাফ

এসকে// 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন