ভূমিকম্পের কাঁপুনির মাঝেও টিকে থাকার সহজ কিছু কৌশল
গত দুই-তিন দিন ধরে মনে হচ্ছে ঢাকার জীবন যেন অদৃশ্য এক অস্থিরতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ভোরবেলা সবাইকে অপ্রস্তুত করে দেয়া ২১ নভেম্বরের ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প শুধু দেয়াল নড়িয়ে দেয়নি, নড়িয়েছে মানুষের ভেতরের নিরাপত্তাবোধও। কয়েক সেকেন্ডের সেই কাঁপুনি যেন দৈনন্দিন স্বাভাবিকতার ওপর বড় এক প্রশ্নচিহ্ন এঁকে গেছে।
তবে বিশ্বের অনেক দেশে এমন ভূমিকম্প হওয়াকে দৈনন্দিন জীবনের একটি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
বিশেষ করে যেসব দেশ ভৌগলিকভাবে সক্রিয় ফল্ট লাইনের ওপর বা প্রশান্ত মহাসাগরের “রিং অফ ফায়ার” অঞ্চলে অবস্থিত, সেখানে মানুষ প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছে। তারা প্রস্তুতি ও সচেতনতার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা অর্জন করে এবং বিপদ মোকাবিলায় দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়।
এই দেশগুলোর মানুষ ভূমিকম্প মোকাবিলায় মূলত তিনটি স্তরে কাজ করে: প্রস্তুতি, প্রতিক্রিয়া এবং পুনরুদ্ধার। এর মধ্যে রয়েছে ভূমিকম্প-সহনশীল ভবন নির্মাণ, ব্যক্তিগত ও কমিউনিটি জরুরি পরিকল্পনা তৈরি, বাড়ি ও মূল্যবান জিনিসপত্রকে ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষিত রাখা এবং নিয়মিত মহড়া ও নিরাপত্তা অনুশীলনের মাধ্যমে অভ্যস্ত হওয়া।
ঘর ও জিনিসপত্র সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে তারা কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে চলে। লম্বা আসবাবপত্র ও ভারী জিনিস দেয়ালে আটকানো হয়, ওয়াটার হিটার ও গ্যাসের যন্ত্রপাতি স্থিতিশীল স্থানে রাখা হয়, এবং ভঙ্গুর বা ভারী বস্তু নিচের দিকে রাখা হয় যাতে কেঁপে পড়লেও আঘাত কম হয়। এছাড়া জরুরি কিটে রাখা হয় পানি, শুকনো খাবার, প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম, টর্চলাইট, ব্যাটারি চালিত বা হাত-ঘোরানো রেডিও এবং অতিরিক্ত ব্যাটারি।
পরিবারের সদস্যরা আগেই একটি জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করে রাখে। যদি আলাদা হয়ে পড়েন, কোথায় মিলিত হবেন এবং কীভাবে যোগাযোগ করবেন তা আগে থেকেই ঠিক থাকে। নিয়মিত এই পরিকল্পনার অনুশীলন মানুষকে বাস্তব পরিস্থিতিতে ভীত না হয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে সাহায্য করে।
সরকার ও কমিউনিটি পর্যায়ে নতুন ভবন নির্মাণ এবং পুরনো ভবন সংস্কারের ক্ষেত্রে শক্তিশালী বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা হয়। ভবনগুলো ভূমিকম্প-সহনশীল হয়, আর পুরনো ভবনগুলোর স্থায়িত্ব বাড়াতে নিয়মিত সংস্কার করা হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অভ্যস্ততা। যারা ঘন ঘন ভূমিকম্পের সঙ্গে লড়াই করে অভ্যস্ত, তারা মাথা ঠান্ডা রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। সচেতনতা, প্রস্তুতি এবং স্থিতিশীলতা- এই তিনটি কৌশলই তাদের বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষমতা নিশ্চিত করে।