উত্তর–দক্ষিণে হুহু করে নামছে তাপমাত্রা, ধেয়ে আসছে শৈত্যপ্রবাহ
ভোরের আকাশ যেন ধোঁয়াটে কোনো ক্যানভাস। উত্তরের মাঠঘাট জুড়ে কুয়াশা নেমে এলে বাতাসের প্রতিটি কণা হয়ে ওঠে কনকনে ঠান্ডা। ডিসেম্বরের শুরুর এই সকালগুলো যেন ঘোষণা দিচ্ছে—শীত তার রাজত্ব শুরু করেছে। একদিকে কুড়িগ্রাম–পঞ্চগড়, অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গা—সবখানেই শীতের হিম নিশ্বাস এসে থমকে দিচ্ছে জনজীবনের রুটিন।
উত্তরাঞ্চলে দিন–রাতের তাপমাত্রা হু হু করে নামতে নামতে শনিবার (০৬ ডিসেম্বর) ভোরে নেমে গেছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। ভোর ৬টার সেই মুহূর্তে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ—কুয়াশা আর ঠান্ডার নিখুঁত জমাট বাঁধা অবস্থা। পরপর কয়েক দিন ১২ ডিগ্রির ঘরে থাকা তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা হঠাৎ কমে ১১-তে নামায় শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষক জিতেন্দ্রনাথ রায়।
শীতের এই তীব্রতা যেন শুধু উত্তরেই নয়—ধীরে ধীরে দক্ষিণ–পশ্চিমেও ছড়িয়ে পড়ছে তার ছায়া। চুয়াডাঙ্গায় গত কয়েক দিন ধরে রাতভর বাতাস হিমেল হয়ে বইছে। শনিবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস—এই মৌসুমে এখানকার সবচেয়ে কম। সেই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮১ শতাংশ। আবহাওয়া পর্যবেক্ষকদের ধারণা, খুব শিগগিরই জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
হিমেল হাওয়া আর কুয়াশার চাদরে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও স্বল্প আয়ের মানুষজন। সকাল-বিকেল মাঠ-ঘাটে কাজ করা শ্রমজীবীদের জীবন যেন আরও কঠিন হয়ে উঠছে। শীতের তীব্রতাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শিশু-বৃদ্ধদের ভোগান্তিও। চুয়াডাঙ্গা ও আশপাশের এলাকায় নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর–ঠান্ডা ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডে এখন সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের দীর্ঘ লাইন।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জামিনুর রহমান জানিয়েছেন, সামনে তাপমাত্রা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরের হিমেল বাতাস নেমে এলে শৈত্যপ্রবাহের গতিও বাড়তে পারে।
শীতের এই অগ্রযাত্রা যেন স্পষ্ট করে দিচ্ছে—এখনো অনেকটা পথ বাকি। কুয়াশার প্রভাত আর হিমেল সন্ধ্যা মিলেই দেশজুড়ে তৈরি হচ্ছে এক দীর্ঘ, কঠিন শীতের গল্প।
এসি//