শীতে জবুথবু চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গার সকালগুলো এখন রোদের অপেক্ষায় থেকেও সূর্যহীন। ঘন কুয়াশার ভেতর দিয়ে হিমেল বাতাস বয়ে এসে যেন শরীরের গভীর পর্যন্ত শীত নামিয়ে দিচ্ছে। সীমান্তবর্তী এই জেলায় শীত আর কুয়াশা মিলেমিশে জনজীবনে এক ধরনের নীরব স্থবিরতা তৈরি করেছে। দিন গড়ালেও উষ্ণতার দেখা নেই, আর সেই সঙ্গে বাড়ছে মানুষের কষ্ট।
কয়েক দিন ধরেই চুয়াডাঙ্গায় সকাল ও সন্ধ্যায় তাপমাত্রার তারতম্য বেশি অনুভূত হচ্ছে। মেঘলা আকাশ, ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। দিনভর রোদের অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন ছিন্নমূল, খেটে খাওয়া শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ। একই দিন সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তখন বাতাসের আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয় ৯৭ শতাংশ।
হঠাৎ করে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় জেলাজুড়ে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কুয়াশার কারণে সড়কগুলোতে যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে, ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ধীরগতির হয়ে পড়েছে।
শীতের প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্যখাতেও। হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বয়স্ক ও শিশুরা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, বুধবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার এই তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত সপ্তাহের তুলনায় শিশুদের ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগী বেড়েছে। বিশেষ করে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
কুয়াশা আর শীতের এই দিনে উষ্ণতার অভাব শুধু প্রকৃতিতেই নয়, মানুষের জীবনেও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে—যেখানে সবচেয়ে বেশি লড়াই করতে হচ্ছে দিনমজুর ও অসহায় মানুষদের।
এসি//