তীব্র শীতে স্থবির কুড়িগ্রাম, মানবিক বিপর্যয়ের মুখে হাজারো মানুষ
দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। টানা চার দিন ধরে জেলার তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল প্রায় ১০০ শতাংশ। এসব তথ্য জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র।
তিনি জানান, চলতি মাসের শেষ দিকে তাপমাত্রা আরও কমে শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এর আগে বুধবারও জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর মঙ্গলবার ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে পুরো জেলা। হিমেল বাতাস ও কনকনে ঠান্ডায় সড়কগুলো প্রায় জনশূন্য। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশাচালক ও নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতের কারণে কাজ কমে যাওয়ায় অনেকের দৈনিক আয় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
শীতের প্রভাবে জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার উপসর্গ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, শীতকালে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক। জেলার নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি ২৯৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শীতজনিত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
তবে সবচেয়ে করুণ চিত্র দেখা যাচ্ছে চরাঞ্চলে। খোলা পরিবেশে বসবাসকারী এসব মানুষ হিমেল বাতাসে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। চিলমারী উপজেলার চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় ৭৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। ব্রহ্মপুত্র নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন মনতলা, শাখাহাতি ও কড়াই বরিশাল চরসহ একাধিক চরে বসবাসরত শিশু ও বৃদ্ধরা এই শীতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। সরকারি সহায়তায় পাওয়া মাত্র ১৮০টি কম্বল প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার নয় উপজেলায় শীতার্ত মানুষের জন্য এ পর্যন্ত ২২ হাজার কম্বল বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে বেশি। জেলার ৪৬৯টি চরের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটের পাশাপাশি তীব্র শীতে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
তিনি বলেন, সীমান্তঘেঁষা দুর্গম চরাঞ্চলে প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা এখনও পর্যাপ্ত নয়। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এটি বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে।
এমএ//