আন্তর্জাতিক

ভারতে বড়দিনের উৎসবে উগ্রপন্থিদের তাণ্ডব, ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর

ভারতে বড়দিনের উৎসবকে ঘিরে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর নজিরবিহীন তাণ্ডবের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন রাজ্যে আয়োজিত বড়দিনের অনুষ্ঠানস্থলে হামলা, ভাঙচুর ও আতঙ্ক ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নারী ও শিশুসহ সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দ্য হিন্দুসহ একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে—উগ্র স্লোগান দিয়ে বড়দিনের সাজসজ্জা, মঞ্চ, ক্রিসমাস ট্রি ও সান্তা ক্লজের মূর্তি ভাঙচুর করছে উত্তেজিত কট্টরপন্থীরা। কোথাও শপিংমলের ভেতরেও হামলা চালানো হয়।

অভিযোগ রয়েছে, এসব হামলার পেছনে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), বজরং দল ও আরএসএস–ঘনিষ্ঠ উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সম্পৃক্ততা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে বিজেপি–শাসিত মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, আসাম ও হরিয়ানায়।

এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশের জাবালপুরে একটি ঘটনায় তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সেখানে বড়দিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া এক দৃষ্টিশক্তিহীন খ্রিস্টান নারীকে হেনস্তা ও মারধর করতে দেখা যায় বিজেপির স্থানীয় নেত্রী আঞ্জু ভারঘাভাকে। ভিডিও ভাইরাল হলে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। 

বিরোধী দল কংগ্রেস ঘটনাটিকে ‘বর্বরতা ও নির্মমতার দৃষ্টান্ত’ হিসেবে আখ্যা দেয়। চাপের মুখে বিজেপি ভারঘাভাকে শোকজ নোটিশ দিলেও তিনি নিজের কোনো ভুল হয়নি বলে দাবি করেছেন। 

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের হয়নি।

আসামের নলবাড়ি জেলায় একটি খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলে বজরং দলের কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরি ইংলিশ স্কুলে ঢুকে বড়দিনের সাজসজ্জা ভেঙে ফেলা হয়, ক্রিসমাস ট্রিতে আগুন দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্কুলের পাশের দোকানগুলোতেও ভাঙচুর চালানো হয়।

ওড়িশা ও দিল্লির ভিডিওতে দেখা যায়, সান্তা ক্লজের ক্যাপ বিক্রেতা ও বড়দিনের প্রস্তুতিতে থাকা নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে। কোথাও ‘হিন্দু দেশে খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার’—এমন অভিযোগ তুলে উৎসব বন্ধের চেষ্টা করা হয়।

২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর জয়পুর, বিদিশা, ভোপাল, গুয়াহাটি, বেরিলি ও ইন্দোরসহ বিভিন্ন শহরে একই ধরনের হামলার খবর পাওয়া গেছে। এমনকি আম আদমি পার্টি–শাসিত পাঞ্জাব ও বাম–শাসিত কেরালাতেও বিচ্ছিন্নভাবে বড়দিনের অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কেরালার পালাক্কড় জেলায় আরএসএস সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যারল গান বন্ধ করে দেন। বিজেপি–শাসিত উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে রাজ্য পর্যটন দপ্তর পরিচালিত একটি হোটেলে বড়দিনের অনুষ্ঠানও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বিভিন্ন খ্রিস্টান ও মানবাধিকার সংগঠন। ক্যাথলিক বিশপস’ কনফারেন্স ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে খ্রিস্টানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আইনগত ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটির মতে, এসব হামলা ধর্ম পালনের সাংবিধানিক অধিকারকে গুরুতরভাবে ক্ষুণ্ন করছে।

নির্যাতিত খ্রিস্টানদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ওপেন ডোরস জানিয়েছে, শুধু বড়দিনের সময়েই ভারতে খ্রিস্টানদের ওপর ৬০টির বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে ইউনাইটেড ক্রিশ্চিয়ান ফোরাম–এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে দেশটিতে খ্রিস্টানদের ওপর অন্তত ৬০০টি হামলার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

 

এমএ//

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন