আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

করোনায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিশুদের আক্রান্তের হার

গতবছর কোভিড ১৯ সংক্রমনের পর থেকে সেপ্টেম্বর অক্টোবর পর্যন্ত করোনায় শিশুদের তেমন একটা আক্রান্ত হতে দেখা যায়নি। নভেম্বর থেকে শিশুদের আক্রান্তের সংখ্যা কিছু বাড়লেও, এ বছরের মার্চ থেকে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে শিশুদের করোনা সংক্রমন। জানা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটে প্রায় দুই হাজার শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। বর্তমানে ভর্তি আছে ১৮ শিশু। 

ঢামেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান সাঈদা আনোয়ার বলেন, যেসব শিশু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসছে, তাদের অনেকের রোগের চিকিৎসা করাতে এসে কোভিড শনাক্ত হচ্ছে। কেউ জ্বর, কাশিতে ভুগে আসছে, আবার কেউ আসছে ডায়রিয়া নিয়ে। তবে অনেক সময় বেশী জটিলতা দেখা দিচ্ছে,  যেসব শিশুদের আগে থেকেই হৃদরোগ, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা আছে। তাদের অবস্থা বেশী খারাপ হচ্ছে। আবার অনেকে আসছে গায়ে ছোপছাপ দাগ, হাত-পা ফোলা নিয়ে অর্থাৎ কাওয়াসাকি ডিজিজের মতো উপসর্গ নিয়ে। এ রোগের নাম এমআইএসসি (মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিনড্রোম বলা হয়)। এটি কোভিডের পর হয় এবং শিশুদের জন্য সংকটজনক হয়ে উঠতে পারে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালেও ১৭০ জন চিকিৎসা নিয়েছে। এখন ভর্তি আছে ৯ জন।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল এর সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বলেন, ৫ মাস বয়সি বাচ্চাও আক্রান্ত হচ্ছে এ রোগে। আমরা দেখছি যে বেশীরভাগ শিশু সংক্রমিত হচ্ছে তার বাবা মা থেকে। যেসব বাবা মায়ের কোভিড হয়েছে সেই পরিবারের অনেক শিশুরই করোনা হচ্ছে। শিশু হাসপাতালে বেশীরভাগ শিশু বমি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকে বাচ্চার ডায়রিয়ার পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। একটু সময় লাগলেও বেশীরভাগ শিশু চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠছে। অনেক শিশু কোভিডে আক্রান্তের পর বাসাতেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আছে। 

ইউনিসেফের জাতীয় পরামর্শক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বললেন, করোনার নতুন ধরনে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ইউকে ভেরিয়েন্টের করোনায় শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। যেটা করোনার প্রথম দিকে ছিলো। ইউকে ভেরিয়েন্ট অত্যন্ত শক্তিশালী এটার আক্রমনের সক্ষমতা অনেক। তারা ৭০% কার্যকর মানুষের শরীরে আক্রমন করতে।

অধ্যাপক ডা:  বে-নজির আহমেদ আরো বলেন, কোভিডে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এতে শিশুদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল সিএনএন এ একটি নিউজে প্রকাশ পেয়েছে যে কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৩৪ শতাংশ ব্রেন এ আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারন। এটা যদি শিশেুদের ক্ষেত্রে হয় তাহলে সেটা খুব উদ্বেগের বিষয় হবে। কারন এতে তার বিকাশে বড় ধরনের বাধা হবে। কারন শিশুর সামনে দীর্ঘ সময় পড়ে আছে। তাই এ বিষয়ে অভিভাবকদের  অনেক বেশী সচেতন হতে হবে। শিশুদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে অভ্যস্ত করতে হবে।   

ঢাকা শিশু হাসপাতাল এর সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বলেন, বমি, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট থাকলে অবশ্যই কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে। বাবা মা করোনা আক্রান্ত হলে শিশুদের দূরে রাখতে হবে, সেই সঙ্গে দুই বছর থেকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।  সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো ঢাকার কোন হাসপাতালে কোভিডে আক্রান্ত শিশুদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র নেই। বড় ধরনের ঝুঁকি এড়াতে শিশুদের জন্য আইসিইউ স্থাপনের তাগিদ দিলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এএ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন