আর্কাইভ থেকে ফুটবল

মেসির ইন্দ্রজালে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা

আগের ম্যাচে পেনাল্টি মিস করা মেসি এবার হলেন দলের ত্রাতা। কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে লিওনেল মেসির জাদুতে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় তারা।

৬৫ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে চিতার মতো অস্ট্রেলিয়ান মিডফিল্ডের ট্রায়াঙ্গেল ভেদ করে ছুটতে শুরু করেছিলেন লিওনেল মেসি। সেই দৌড় এতটাই নান্দনিক ছিল যে মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়েরা অভিবাদন জানিয়ে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছিলেন মেসির জন্য। এরপর হুলিয়ান আলভারেজকে বল দিয়ে প্রতিপক্ষ রক্ষণে ঢুকেও পড়েছিলেন।

যদিও শেষ পর্যন্ত মেসির সেই একক দৌঁড় থেকে গোল আসেনি, তবে মেসির জাদুকরি সেই ঝলকে দর্শকেরা দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাতে ভুল করেননি।

মেসি তো এমনই জাদুকর, এক দৌড়েই জাগিয়ে দিয়েছিলেন আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়াম থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজার পর্যন্ত।

মেসির গোলেই যে ম্যাচের ৩৫ মিনিটে লিড নেয় আার্জেন্টিনা। যেটি বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে মেসির করা প্রথম গোল। আর এটি ছিল ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে মেসির ক্যারিয়ারের ১০০০তম ম্যাচ।

শুরু থেকে অস্ট্রেলিয়ার ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। মাঝমাঠের দখল নেন রদ্রিগো দে পল ও এনজো ফার্নান্দেস। সেট পিস থেকে দুই-একবার অস্ট্রেলিয়া আক্রমণের চেষ্টা করলেও সুফল পায়নি। নিকোলাস ওতামেন্দির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ ছিল অটুট।

আক্রমণভাগে মেসি ও হুলিয়ান আলভারেসের পায়েই ছিল অধিকাংশ বল। মেসিকে শুরু থেকে কড়া পাহারায় রাখেন তিন অজি ডিফেন্ডার।

শেষ রক্ষা হয়নি। ৩৪ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। মেসির নেয়া কিক অজিদের রক্ষণ দেয়াল ভেদ করতে না পারলেও মেসির পা থেকে ফিরতি বল পেয়ে যান আলেক্সিস ম্যাকঅ্যালিস্টার।

তিনি দ্রুত বল বাড়ান বক্সের ডান প্রান্ত ঘেষে দাঁড়ানো ওতামেন্দির দিকে। ওতামেন্দি প্রথম টাচেই বল পাঠিয়ে দেন দ্রুত বক্সে ঢোকা মেসির কাছে।

ফ্রি কিকের পর প্রতিপক্ষের ডি বক্সের জটলা থেকে বাঁ পাশ থেকে দুর্দান্ত এক গোলে আর্জেন্টিনাকে লিড এনে দেন মেসি। সবমিলিয়ে এটি বিশ্বকাপে তার ৯ নবম গোল, নক আউট পর্বে প্রথম। এ ছাড়া বিশ্বকাপে গোলের হিসেবে কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে গেলেন মেসি।

বিরতি থেকে ফিরেই ৫৭ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয়বার আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দেন আলভারেজ। ডি বক্সের মধ্যে দুই আর্জেন্টাইন ফুটবলারের সামনে পরে যান ম্যা ট রায়ান। একজনকে কাটাতে পারলেও আলভারেজকে এড়াতে পারেননি রায়ান। তার পা থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন আলভারেজ।

কিন্তু এই আনন্দ শেষ দিকে এসে হারাম করে দেয় অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের ৭৭তম মিনিটে আর্জেন্টিনাকে স্তব্ধ করে ম্যাচে ফেরার আভাস দেয় অস্ট্রেলিয়া। আর্জেন্টিনার বক্সে দূরপাল্লার শটে গুডউইন গোল করে ব্যবধান কমান। তার নেয়া শট এনজো ফার্নান্দেজের মুখে রিফ্লেক্ট করে আর্জেন্টিনার জালে জড়ায়। গোল পাওয়ার পর আক্রমণে ধার বাড়ায় অসিরা। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন ঘটেনি। জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে এবার জায়গা করে নিল শেষ আটের লড়াইয়ে।

কোয়ার্টারে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। ২০১৪ বিশ্বকাপে এ নেদারল্যান্ডসকে সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল মেসিরা। আগামী ৯ ডিসেম্বর রাতে মুখোমুখি হবে তারা।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন