আর্কাইভ থেকে ফুটবল

পেলের রেকর্ড ভাঙলেও নেইমারকে যে কারণে স্বীকৃতি দেবে না ব্রাজিল

দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে গোল করার পর পেলের জাতীয় দলের হয়ে করা আন্তর্জাতিক গোলের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে নেইমার। পেলের সমান গোল করতে নেইমারের দরকার মাত্র একটি গোল। আর ভাঙতে দরকার দুইটি। কিন্তু এ নিয়ে আছে বিতর্ক।

ফিফার পরিসংখ্যান অনুযায়ী পেলের গোল সংখ্যা ৭৭। আর নেইমারের ৭৬। কিন্তু ব্রাজিল ফুটবল সংস্থা (সিবিএফ) ও স্বয়ং পেলে ফিফার এই পরিসংখ্যান এর সাথে একমত নয়। কিন্তু কেন?

অনেক বছর ধরেই পেলের গোল সংখ্যা নিয়ে ফিফা এবং ব্রাজিল ফুটবল সংস্থা (সিবিএফ) কখনোই একমত হতে পারেনি। স্বয়ং পেলের দাবি তিনি ক্যারিয়ারে মোট ১২৮৩টি গোল করেছেন। যে কারণে গত মার্চে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আসলেই তার গোলের রেকর্ড ভেঙেছেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

পেলের এবং সিবিএফের দাবি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ফুটবলে তিনি ১১৩ ম্যাচে মোট গোল করেছেন ৯৫টি। ফিফার পরিসংখ্যান অনুযায়ী যেটি ৯১ ম্যাচে ৭৭ গোল। শুধু পেলে নয় ব্রাজিলের শীর্ষ পাঁচ গোল স্কোরারের গোল সংখ্যা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে ফিফা এবং সিবিএফ এর।

ফিফার মতে, সেলেসাওদের শীর্ষ পাঁচ গোলতারর হিসাব এই রকম :

পেলে- ৭৭ গোল

নেইমার -৭৬ গোল*

রোনালদো - ৬২ গোল

রোমারিও - ৫৬ গোল

জিকো - ৪৪ গোল

যেখানে, সিবিএফ অনুসারে শীর্ষ পাঁচ জনকে এইভাবে দেখায়:

পেলে- ৯৫ গোল

নেইমার -৭৬ গোল*

রোনালদো - ৬৭ গোল

জিকো - ৬৬ গোল

রোমারিও - ৫৬ গোল

তাহলে বাড়তি গোল এবং ম্যাচ সংখ্যা আসলো কিভাবে?

আসলে ফিফা ও সিবিএফ আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংজ্ঞাতেই একমত না। ফিফা শুধুমাত্র দুটি দেশের মধ্যকার ম্যাচকেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে ধরে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, ফিফা কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগের ২৮ সেপ্টম্বর ব্রাজিল এবং তিউনিশার মধ্যকার প্রীতি ম্যাচটি কথা বলা যায়। যেখানে গোল করেছিলেন রাফিনহা, নেইমার এবং পেদ্রো। এই তিনজনের গোল যোগ হয়েছে তাদের আন্তর্জাতিক গোলের তালিকায়।

সমস্যা হচ্ছে, এখন যেমন শুধু দুই দেশের মধ্যেই আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়, আগে তেমনটা ছিল না। এক সময় জাতীয় দলের সঙ্গে ক্লাবগুলোরও প্রীতি ম্যাচ খেলার প্রচলন ছিল। ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে ইন্টার মিলান ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মতো অনেক ক্লাবের সঙ্গেই ম্যাচ খেলেছে ব্রাজিল। আর এসব ম্যাচ থেকেই মূলত এসেছে পেলের বাড়তি গোলগুলো।

ব্রাজিলের জার্সিতে বিভিন্ন ক্লাবের বিপক্ষে মোট ২২টি ম্যাচ খেলেছেন পেলে, করেছেন ১৮ গোল। যে কারণে ৭৭ থেকে তার গোলসংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫-এ।

মজার বিষয় হচ্ছে, ব্রাজিলের জার্সিতে নেইমারেরও কিন্তু এরকম কিছু বাড়তি গোল রয়েছে। ২০১২ ও ২০১৬ অলিম্পিকে ব্রাজিলের হয়ে ১৪টি ম্যাচ খেলেছেন নেইমার, করেছেন ৮ গোল। জিতেছেন একটি স্বর্ণপদকও।

তবে, অলিম্পিকের ফুটবল দল মূলত অনূর্ধ্ব-২৩ বছর বয়সী খেলোয়াড়দের নিয়েই গঠন হয়। প্রতি দলে মাত্র তিনজন বেশি বয়স্ক খেলোয়াড় রাখার নিয়ম রয়েছে। যে কারণে ফিফা অলিম্পিককে অনূর্ধ্ব-২৩ টুর্নামেন্ট হিসেবেই ধরে থাকে।

পেলের রেকর্ড কি ভাঙতে পারবেন নেইমার?

ইতোমধ্যে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে ব্রাজিল। সম্ভাবনা আছে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টারেই পেলের রেকর্ড স্পর্শ করে ফেলবেন নেইমার। এই ম্যাচে না হলেও ব্রাজিল টুর্নামেন্টে আরও এগোলে সেমিফাইনাল বা ফাইনালেও এই রেকর্ড ভাঙতে পারেন তিনি।

কিন্তু বড় উপলক্ষ হলেও পেলে ও সিবিএফের প্রতি সম্মান রেখে হয়তো বিশেষ কোনো উদযাপন করবেন না নেইমার। বিশেষ করে পেলের সাম্প্রতিক অসুস্থতার খবরের পর রেকর্ড ভাঙার উদযাপন-এর সম্ভাবনা এখন নেই বললেই চলে।

তবে পেলে ও সিবিএফের হিসাব যদি মেনে নেন নেইমার, তাহলে এই রেকর্ড ভাঙতে আরও ২০টি গোল করতে হবে তাকে। এই বছরের আগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবলে বছরে ৫.৮৩ গড়ে মোট ৭০টি গোল করেছেন এই ৩০ বছর বয়সী। এই হারে পেলের রেকর্ড ভাঙতে আরও তিন থেকে চার বছর লাগবে নেইমারের।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন