আর্কাইভ থেকে এশিয়া

মেয়েটি মরেছে কিন্তু ধর্ষণের শিকার হয়নি, এই স্বস্তি?

১ জানুয়ারি মধ্যরাতে ২০ বছরের তরুণী অঞ্জলি সিংহের মৃত্যুর ঘটনায় শিউরে উঠেছেন দিল্লিবাসী। বর্ষবরণের রাতে অঞ্জলিকে গাড়ি চাপা দেয়ার পর টেনে নিয়ে গিয়েছিল আরও অন্তত ১৩ কিলোমিটার। অঞ্জলির পরিবারের অভিযোগ, তাদের বাড়ির মেয়েকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। পরে মৌলানা আজাদ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকদের একটি বোর্ড অঞ্জলির দেহের ময়নাতদন্ত করে। মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পুলিশের কাছে জমা করা হয়েছে।

ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে যে অঞ্জলির মাথার ঘিলু অনুপস্থিত। মাথার খুলি গহ্বরও খোলা অবস্থায় রয়েছে। শিরদাঁড়ার বেশ কয়েকটি জায়গা ভেঙে গেছে। অঞ্জলির দেহের পাঁজরগুলি বুকের পিছন দিক দিয়ে উন্মুক্ত হয়ে গেছে। তার সারা দেহে ৪০টি ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। তবে তাকে কোনও ভাবে যৌন হেনস্থা করা হয়নি বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়।

এ বিষয়টি নিয়ে নিজে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে আলোচিত-সমালোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এটি পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

২০ বছর বয়সী অঞ্জলি সিং স্কুটার চালাচ্ছিল রাতে। একটি বালেনো গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মেয়েটি পড়ে গিয়ে গাড়ির চাকায় আটকে যায়। গাড়ি কিন্তু চলতে থাকে। ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত  মেয়েটিকে চাকায় নিয়ে চলে। এরপর রাস্তায় পড়ে থাকে মেয়েটির নিথর শরীর। খুলি আছে, মগজ নেই, শরীর আছে,  মাংস নেই। রিব ঢুকে গেছে স্পাইনে, মেরুদণ্ড ঢুকে গেছে পেটে। মোদ্দা কথা থেতলে গেছে শরীর। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে ছিঁড়ে যাওয়া, পিষে যাওয়া, থেতলে যাওয়া ছিন্নভিন্ন শরীরের বর্ণনা আছে। কিন্তু মিডিয়া সেই রিপোর্ট থেকে যে তথ্যকে হাইলাইট করলো সেটা হলো ভ্যাজাইনা ঠিক আছে, রেপের চিহ্ন নেই। অনেকে স্বস্তি পেয়েছে, যাক, তাহলে ভ্যাজাইনাটা বেঁচে গেছে, রেপ টেপ হয়নি।

একটি মেয়ের ব্রেন, কিডনি, লিভার, হৃদপিণ্ড ফুসফুসের চেয়ে ভ্যাজাইনাকে মূল্যবান বলে ধরা হয়। সোজা কথা, একটি মেয়ের জীবনের চেয়ে ভ্যাজাইনার ইম্পর্টেন্স বেশি। মেয়েটির যে কিডনি লিভার হৃদপিণ্ড ফুস্ফুস ইত্যাদি ভাইটাল অরগান থেতলে গেল, ব্রেন গলে গেল সে নিয়ে মাথা ব্যথার চেয়ে ভ্যাজাইনা নিয়ে মাথা ব্যথাটা বেশি।

মেয়েটি ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত বীভৎস যন্ত্রণা পেতে পেতে মরে গেছে, সেই নিয়ে দুঃখ করার চেয়ে, মেয়েটি মরেছে মরেছে কিন্তু ধর্ষণের শিকার  হয়নি, এই নিয়ে একটি গোপন স্বস্তি কাজ করছে অনেকের মধ্যে।

উল্লেখ, নববর্ষের রাতে স্কুটি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ২০ বছরের এক তরুণী। গাড়ির সঙ্গে তাঁর স্কুটির সংঘর্ষ ঘটে। দুর্ঘটনার জেরে তরুণীর পোশাক গাড়ির চাকায় আটকে যায়। এই অবস্থাতেই ছুটতে থাকে গাড়িটি। যার জেরে গাড়ির চাকায় আটকে যান তরুণী। তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে কয়েক কিমি পর্যন্ত চলে যায় গাড়িটি। দিল্লির খানজাওয়ালা এলাকায় গিয়ে থামে গাড়িটি। বিবস্ত্র অবস্থায় পরে রাস্তায় তরুণীর দেহ উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলপুরী এসজিএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তরুণীকে। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন